গাজায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর চলমান ৪৪ দিনে ইসরায়েল অন্তত ৪৯৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে—এমনটাই জানাল গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু, নারী ও প্রবীণ।
মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের এই ধারাবাহিক লঙ্ঘন “গুরুতর এবং পদ্ধতিগত”, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে সরাসরি অমান্য করছে। শুধু শনিবারই ইসরায়েল ২৭ বার চুক্তি ভেঙেছে—এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের, আহত হয়েছেন আরও ৮৭ জন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী বিধ্বস্ত অঞ্চলে খাদ্য, ঔষধ এবং জরুরি সহায়তা পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা অবাধভাবে চলতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। বরং শনিবার গাজাজুড়ে নতুন করে বোমা বর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় নিহত হয়েছে আরও অসংখ্য বেসামরিক মানুষ।
ইসরায়েল দাবি করছে, গাজার ‘হলুদ রেখা’ এলাকার ভেতর হামাসের এক যোদ্ধা ইসরায়েলি সৈন্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর তারা পাল্টা অভিযান চালায়। তাদের দাবি, পাঁচজন সিনিয়র হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে।
হামাস ইসরায়েলকে বারবার এই চুক্তি মানতে চাপ দিচ্ছে। মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে দ্রুত পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সদস্য ইজ্জত আল-রিশেক বলেছেন, ইসরায়েল “চুক্তি ভাঙার অজুহাত খুঁজে ধ্বংসযুদ্ধ চালাতে চাইছে।” তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল—হামাস নয়।
গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আযুম সরাসরি জানাচ্ছেন, বাস্তবে গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতির শান্তি নেই। তার ভাষায়, “এটা কাগজে-কলমে বিরতি, মাটিতে নয়।” প্রতিদিনের হামলা মানুষকে আরও অনিরাপদ করে তুলছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরায়েল উত্তর গাজায় আরও ভেতরে তাদের বাহিনী পুনঃস্থাপন করছে। এতে বহু পরিবার সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ইসরায়েল যে ‘হলুদ রেখা’ পর্যন্ত বাহিনী সরিয়ে নিয়েছিল, এখন তার বাইরেও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সীমান্তরেখার দিকে এগোলে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে নিয়মিত গুলি চালানো হচ্ছে। বলতেই হয়—গাজার অর্ধেকের বেশি এখনও ইসরায়েলের দখলে।
হামাস বলছে, ইসরায়েল চুক্তির নির্ধারিত সীমারেখা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করছে এবং অব্যাহত লঙ্ঘনের মাধ্যমে চুক্তিকে অকার্যকর করে দিচ্ছে।

