টানা ছয় দিনের ফ্লাইট বিশৃঙ্খলার পর যাত্রীদের কাছে টিকিট বাবদ ৬১০ কোটি রুপি ফেরত দিয়েছে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স। একইসাথে তাদের কাছে জমা থাকা প্রায় ৩ হাজার লাগেজও হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই হিসাব প্রকাশ করে।
ইন্ডিগো জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংস্থাটি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই ফ্লাইট অপারেশন আগের ছন্দে ফেরানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, রোববার রাত ৮টার মধ্যে যাত্রীর সমস্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৬১০ কোটি রুপি ফেরত দেওয়া হয়েছে, আর বাকিটুকু ফেরতের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পাশাপাশি যাত্রীদের ৩ হাজারেরও বেশি মালপত্রও তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিগো নিজেদের অবস্থানও স্পষ্ট করেছে। রোববার প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সেদিন ৬৫০টি ফ্লাইট বাতিল হলেও ১,৬৫০টি নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী চলছে। সাধারণত দৈনিক প্রায় ২,৩০০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে ইন্ডিগো। শুক্রবার যেখানে মাত্র ৭০৬টি ফ্লাইট চালু ছিল, রোববার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৬৫০-এ। তাদের ১৩৮টি গন্তব্যের মধ্যে ১৩৭টিতেই পরিষেবা ব্যাহত হয়নি। এছাড়া ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকিট বাতিল ও রিবুকিং সম্পূর্ণ বিনা খরচে করা যাবে।
ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স জানান, বর্তমানে প্রায় ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সময়মতো পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। যাত্রীদের সহায়তার জন্য আলাদা একটি ‘সাপোর্ট সেল’ চালু করা হয়েছে, যা রিফান্ড ও রিবুকিং সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত সমাধান করছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর তথ্য আগেই জানিয়ে দেওয়ার ফলে বিমানবন্দরের ভিড়ও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গুরুগ্রামের অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি আশ্বাস দেন, “ধাপে ধাপে আমরা ফিরছি।” তার প্রত্যাশা, আগামী বুধবারের মধ্যেই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
উত্পন্ন পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার ইন্ডিগোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় ভারতের ফ্লাইট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। কেন এমন বিশৃঙ্খলা ঘটল, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে বলা হয়। তবে সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে ইন্ডিগো।
ভারতের সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থা হিসেবে পরিচিত ইন্ডিগো গত বুধবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ছয় দিনে প্রায় দুই হাজার ফ্লাইট বাতিল করেছে। শুক্রবারই বাতিল করা হয়েছিল ৬০০টির বেশি ফ্লাইট, তারও আগের দিন বৃহস্পতিবার বাতিল হয় ৫৫০টি ফ্লাইট। পূর্ব নোটিশ ছাড়া বিপুল সংখ্যক ফ্লাইট বাতিলে লাখ লাখ যাত্রী ভোগান্তিতে পড়ে।
কেন এই ইন্ডিগো বিভ্রাট-
ইন্ডিগোর সেবা ব্যাহত হওয়ার নেপথ্যে দায়ী করা হচ্ছে ডিজিসিএর নতুন বিধি ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’-কে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত এই বিধিতে বলা হয়— প্রতি সপ্তাহে পাইলট ও বিমানকর্মীদের ৪৮ ঘণ্টা বিশ্রাম দিতে হবে এবং সপ্তাহে মাত্র দুটি নাইট ল্যান্ডিং করাতে পারবেন একজন পাইলট। এছাড়া পরপর দুইদিন নাইট ডিউটি দেওয়া যাবে সপ্তাহে একবারই।
এই বিধি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের জুনে, তবে বিমানসংস্থাগুলোর অনুরোধে তা পিছিয়ে যায়। সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্ট ডিজিসিএকে নির্দেশ দেয় বিধি কার্যকর করতে এবং জুন ও নভেম্বরে ধাপে ধাপে নিয়মগুলো চালু করা হয়।
কেন সবচেয়ে বেশি সংকটে ইন্ডিগো-
অন্যান্য সংস্থার তুলনায় কম খরচে ফ্লাইট পরিচালনা করে ইন্ডিগো এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেই তাদের উপস্থিতি বড়। দেশের ৯০টি ও বিদেশের ৪৫টি বিমানবন্দরে তারা পরিষেবা দেয়।
ইন্ডিগোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফ্লাইটই নাইট ল্যান্ডিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাই নতুন বিধির কারণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই সংস্থাটিই। নিয়ম মেনে ফ্লাইট চালিয়ে যেতে যে পরিমাণ পাইলট ও কর্মী প্রয়োজন, বর্তমানে তা ইন্ডিগোর নেই। পাইলট–কর্মী সংকটের কথাও তারা স্বীকার করেছে এবং যাত্রীদের কাছে একাধিকবার ক্ষমা চেয়েছে।

