সামুদ্রিক যুদ্ধের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশটি জানিয়েছে, তারা প্রথমবারের মতো সামুদ্রিক ‘বেবি ড্রোন’ ব্যবহার করে রাশিয়ার একটি সাবমেরিনে সফল হামলা চালিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাশিয়ার নভোরোসিয়েস্ক বন্দরে, যেখানে সাবমেরিনটি নোঙর করা অবস্থায় ছিল।
ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানায়, এই হামলায় কিলো ক্লাসের ওই সাবমেরিনটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সংস্থাটির দাবি অনুযায়ী, সাবমেরিনটিতে চারটি কালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ছিল, যেগুলো ব্যবহার করে আগেও ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছিল।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এমন একটি সংবেদনশীল সময়ে এই হামলার তথ্য সামনে আনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিশেষ করে যখন জার্মানির বার্লিনে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক আলোচনা জোরালোভাবে চলছে, ঠিক তখনই এই সামরিক সাফল্যের ঘোষণা দেয় কিয়েভ। বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে ইউক্রেন মূলত একটি রাজনৈতিক ও কৌশলগত বার্তা দিতে চাচ্ছে—আলোচনার টেবিলে বসার অর্থ এই নয় যে তারা সামরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির হাতে তেমন কোনো ‘কার্ড’ নেই। সেই মন্তব্যের পর থেকেই ইউক্রেনের হামলার মাত্রা ও কৌশলে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এর আগেও রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি নৌযানে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। পাল্টা জবাবে রাশিয়াও কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে পণ্যবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে।
ইউক্রেনের নৌবাহিনীর মুখপাত্র দিমিত্রো প্লেটেনচুক বলেন, সাবমেরিনে সরাসরি আঘাত হানা নৌযুদ্ধের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। তার মতে, এই অভিযানের মাধ্যমে ইউক্রেন সমুদ্রযুদ্ধে একটি নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে।
এদিকে যুদ্ধের তৃতীয় শীতেও ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। পাশাপাশি দেশটির পূর্বাঞ্চলে আরও ভূখণ্ড দখলের দাবিও অব্যাহত রেখেছে মস্কো। সব মিলিয়ে যুদ্ধ থামার আলোচনার মধ্যেও বাস্তব পরিস্থিতি যে এখনো ভয়াবহ, সেটিই আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

