তাইওয়ানকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ হলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তাইওয়ানের জন্য ১১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) একযোগে আটটি পৃথক অস্ত্র প্যাকেজ অনুমোদনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমোদন পাওয়া এই অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব বেইজিং ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ককে আরও টানটান করে তুলবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে যে সামরিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন দীর্ঘদিন ধরেই চলছে, এই সিদ্ধান্ত তা আরও গভীর করবে।
প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) জানিয়েছে, প্রতিটি অস্ত্র প্যাকেজ আলাদাভাবে নোটিশ আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এসব প্যাকেজে রয়েছে আধুনিক ড্রোন ব্যবস্থা, রকেট লঞ্চার, ভারী গোলন্দাজ অস্ত্র এবং বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।
সবচেয়ে বড় প্যাকেজটির মূল্য ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর আওতায় তাইওয়ান পাবে ৬০টি এম১০৭এ৭ সেলফ-প্রোপেলড হাউইটজার ও সংশ্লিষ্ট সহায়ক সরঞ্জাম। পাশাপাশি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৮২টি হিমার্স মাল্টিপল রকেট লঞ্চার এবং ৪২০টি আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (অ্যাটাকমস) সরবরাহের।
এ ছাড়া এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের টিউব-লঞ্চড লয়টারিং ড্রোন, প্রায় ৩৫৩ মিলিয়ন ডলারের টিওডব্লিউ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের জাভলিন ক্ষেপণাস্ত্রও এই তালিকায় রয়েছে।
শুধু অস্ত্র নয়, সামরিক সমন্বয় জোরদার করতেও বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সামরিক ইউনিটগুলোর মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিত করতে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ট্যাকটিক্যাল মিশন নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার ও সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি হারপুন ক্ষেপণাস্ত্রের খুচরা যন্ত্রাংশ ও মেরামতের জন্য প্রায় ৯১ মিলিয়ন ডলার এবং এএইচ-১ডব্লিউ সুপারকোবরা হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণ সামগ্রীর জন্য ৯৬ মিলিয়ন ডলারের প্যাকেজও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণার পর এখন মার্কিন কংগ্রেসে ৩০ দিনের একটি আইনি পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কংগ্রেস চাইলে যৌথ প্রস্তাব এনে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের চেষ্টা করতে পারে।
তবে কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের তথ্য বলছে, অতীতে এমন বড় অস্ত্র চুক্তি কংগ্রেস কার্যকরভাবে আটকে দিতে পারেনি। সে কারণে সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই ১১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র প্যাকেজ বাস্তবায়ন এখন মূলত সময়ের অপেক্ষা।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আবারও স্পষ্ট করেছে—তাইওয়ানের নিরাপত্তা ইস্যুতে তারা পিছু হটছে না। আর এই অবস্থান যে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়াবে, তা এখন প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।

