মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে ভেনেজুয়েলার আরো একটি তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজ জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড বাহিনী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোম। সূত্র: রয়টার্স
শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ক্রিস্টি নোম জানান, দুটি প্রধান কারণে ট্যাংকারটি জব্দ করা হয়েছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভেনেজুয়েলা এখনও জ্বালানি তেলের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ভেনেজুয়েলার সরকার তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজগুলোকে শুধু তেল পরিবহনের জন্য নয়, বরং মাদক পাচারের উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ।
এক্সে দেওয়া বার্তায় নোম বলেন, “নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অবৈধ তেল বাণিজ্য এবং এর আড়ালে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান চলবে। আমরা আপনাদের খুঁজে বের করব এবং থামাব।”
শনিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী যৌথভাবে এই ট্যাংকার জাহাজটি জব্দ করে। এর আগে চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর ভেনেজুয়েলার আরেকটি তেলবাহী জাহাজ আটক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এটি হলো মাত্র ১১ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় জব্দের ঘটনা।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন। ২০২৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও মাদুরো সরকার সম্পর্কে তার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করেছে। বিশেষ করে দেশটির ট্যাংকার জাহাজগুলোর ওপর সর্বাত্মক অবরোধ জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প ঘোষণা দেন, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ভেনেজুয়েলার কোনো ট্যাংকার দেশটির বন্দর ত্যাগ করলে বা ভেনেজুয়েলায় প্রবেশের চেষ্টা করলেই তা জব্দ করা হবে। সেই ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই ভেনেজুয়েলার দ্বিতীয় এই ট্যাংকার জাহাজটি আটক করল যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড বাহিনী।
জাহাজটি জব্দ হওয়ার খবর প্রকাশের পর বিস্তারিত জানতে মার্কিন কোস্টগার্ড এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কয়েকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আন্না কেলি বলেন, “জব্দ করা ট্যাংকার জাহাজটি চোরাই তেলে ভর্তি ছিল এবং এটি মাদকসন্ত্রাসী মাদুরোর নেতৃত্বাধীন সরকারকে আর্থিক সহায়তা জোগাচ্ছিল।” পরে একই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সেও পোস্ট করেন তিনি।
এদিকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিজেদের জাহাজ জব্দ হওয়ার ঘটনাকে ‘গুরুতর আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভেনেজুয়েলার সরকার। শনিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির সরকার জানায়, আন্তর্জাতিক জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী একটি বেসরকারি তেল পরিবহনকারী জাহাজ ছিনতাই করেছে এবং জাহাজটির নাবিকদের জোরপূর্বক অন্তর্ধান করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করছে।

