‘ফুকোশিমা ট্র্যাজেডি’র পর টানা ১৫ বছর বন্ধ থাকার পর বিশ্বের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপান। দেশটির রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ পরিষেবা সংস্থা টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো)-এর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্বের বৃহত্তম হিসেবে পরিচিত। এটি জাপানের নিগাতা প্রদেশে অবস্থিত, যা রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে একটি বন্দরনগরী। প্রায় ৪২ লাখ বর্গমিটার বা ৪২০ হেক্টর আয়তনের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে রয়েছে মোট সাতটি পরমাণু চুল্লি। এসব চুল্লির সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ৮.২ গিগাওয়াট। কেন্দ্রটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে টেপকো।
২০১১ সালে জাপানে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্প ও পরবর্তী সুনামির ফলে ফুকোশিমা দাইচি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ দেশটির বিভিন্ন এলাকায় মোট ৫৪টি পরমাণু চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুর্যোগে কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিগুলিও ক্ষতির মুখে পড়ে।
ভূমিকম্প ও সুনামির পর ফুকোশিমা দাইচি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, তা বিশ্বজুড়ে ‘ফুকোশিমা ট্র্যাজেডি’ নামে পরিচিত। পরমাণু ইতিহাসে এটি চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম বিপর্যয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিপর্যয়ের প্রাথমিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মূল্যায়নে বলা হয়, মোট ৫৪টি চুল্লির মধ্যে ৩৩টিকে মেরামত করে পুনরায় উৎপাদনযোগ্য অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই তালিকায় কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
টেপকোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই ৩৩টি চুল্লির মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪টিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া কেন্দ্রের চুল্লিগুলো চালু হলে সচল চুল্লির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২১টিতে।
জাপান বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরমাণু শক্তির ওপর ঐতিহাসিকভাবে ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশটির নীতিগত অবস্থান অনুযায়ী কয়লা ও তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো নিরুৎসাহিত করা হয়। ফুকোশিমা দুর্ঘটনার আগে জাপানের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আসত পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে।

