‘পুতুল-নাচের ইতিকথা’ বাঙালি সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা তৃতীয় উপন্যাস এবং চতুর্থ মুদ্রিত গ্রন্থ। উপন্যাসটি ভারতবর্ষ পত্রিকায় বাংলা ১৩৪১ সালের পৌষ থেকে ১৩৪২ সালের অগ্রহায়ণ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে এটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটিতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয় মেলে।
প্রধান চরিত্র
শশী এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। সদ্য ডাক্তারি পাস করে সে গ্রামে আসে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভিন্নতর সংস্কৃতি কিংবা সহজ ভাষায় উন্নত জীবনের সন্ধানে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু শেষমেশ সে আর প্রথাগত জীবনের বাইরে যেতে পারে না। গ্রামীণ জীবনের প্রতিবেশ-পরিবেশের বৈচিত্র্য আর বাস্তবতার ডালপালা এমনভাবে তাকে আঁকড়ে ধরে যা ছিঁড়ে বের হওয়া শশীবাবুদের সামর্থ্যের বাইরে।
কুসুম এ উপন্যাসের নায়িকা। তার পরিচয় হলো সে তেইশ বছর বয়সি বাঁজা মেয়ে, উপন্যাসের এক চরিত্র পরাণ-এর স্ত্রী, রহস্যময়ী এবং বিচিত্ররূপিনী নারী। তার খামখেয়ালীপনা, খাপছাড়া প্রকৃতি তাকে রহস্যময়ী করে তুলেছে।শশীর জন্য তার ‘উম্মাদ ভালোবাসা’ এই উপন্যাসের শিক্ষগত সৌন্দর্য। কুসুমের স্ফুট-অস্ফুট প্রেম শেষ পর্যন্ত অন্য রূপ নেয়, অন্য মাত্রা নেয়। ‘চপল রহস্যময়ী নারী, জীবনীশক্তিতে ভরপুর, অদম্য অধ্যবসায়ী কুসুম জীবনরহস্যের দূত। শশী যখন তাকে ডাকে, তখন কুসুম বলে “কাকে ডাকছেন ছোটবাবু?
কাহিনী সংক্ষেপ
বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক অনন্য সৃষ্টি ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’। উপন্যাসে প্রধান চরিত্র শশী, পেশায় ডাক্তার। বাস্তবতা ও আধুনিকতার সংযোগে উপন্যাসটি অসাধারণ মর্যাদা লাভ করেছে।
বাংলা সাহিত্যে এই চরিত্র অসামান্য মহিমায় মহিমান্বিত হয়েছে। শশী একদিক থেকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। ভালবাসে একই গ্রামের বাসিন্দা পরানের বউ কুসুমকে। পুতুল নাচের ইতিকথার মাঝে আক্ষরিক অর্থে পুতুল নাচের কোনও কাহিনী নেই। কিন্তু মানুষ গুলো যে কি করে পুতুলের মতো নেচে বেড়ায় তা-ই দেখানো হয়েছে উপন্যাসে।
ক্ষয়িষ্ণু সমাজ বাস্তবতার বিভিন্ন আঙ্গিক এখানে ফুটে উঠলেও কুসুম আর শশী ডাক্তারের ভালবাসা বাঙ্গালির মনকে করেছে আন্দোলিত। এই উপন্যাসের আর একটি দিক হলো, প্রতিটি চরিত্রই একই সাথে দুটো সত্ত্বা লালন করে থাকে। শশীর চরিত্রের দুটো ভাগ-একটাতে তার আবেগ,অন্য দিকে বাস্তবতা। কুসুমকে পুরোপুরি প্রশ্রয় দেয় না ঠিকই কিন্তু সে একদিন না দিলেই সে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। কিন্তু উপন্যাসের শেষ সকলেরই জানা, কুসুম আর শশীর বিচ্ছেদ। পুতুলনাচের ইতিকথা রোমান্টিক ঘরানার উপন্যাস না হলেও শশী-কুসুমের বিয়োগাত্মক পরিণতি পাঠকের মনকে ব্যথিত করে।