নবীজি (সা.) ছিলেন দুনিয়া বিমুখতার সর্বোচ্চ আদর্শ। তাঁর জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। তিনি অল্পে তুষ্ট থাকতেন। মৃত্যুর পরে তাই তাঁর ঘরে বা মালিকানায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু পাওয়া যায়নি। কিছু যুদ্ধাস্ত্র, একটি সাদা খচ্চর আর এক টুকরো জমি ছিল। এগুলো তিনি মৃত্যুর আগেই সদকা করে দিয়েছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৭৩৯)
মৃত্যুর একদিন আগে নবীজি (সা.) তাঁর দাস-দাসীদের মুক্ত করে দেন। তাঁর কাছে ৭ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) ছিল। এগুলোও সদকা করে দেন। এমনকি রাতের বেলায় ঘরে বাতি জ্বালানোর মতো তেলও ছিল না। আয়েশা (রা.) প্রতিবেশীর কাছ থেকে তেল ধার করে এনে বাতি জ্বালান। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৩৭, ২৩৯)
মৃত্যুর একদিন আগে নবীজি দাস-দাসীদের মুক্ত করে দেন। ছিল ৭টি স্বর্ণমুদ্রা, সদকা করে দেন। রাতের ঘরে বাতি জ্বালানোর মতো তেলও ছিল না।
জীবিকার জন্য তিনি মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে লেনদেন করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল এক ইহুদির কাছ থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে খাদ্য শস্য খরিদ করেন এবং নিজের বর্মটি তার কাছে বন্ধক রাখেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৫০৯ ও ২,০৬৮)
তিনি আরো বলেন, ‘মৃত্যুর সময়ে আল্লাহর রাসুলের লৌহবর্মটি এক ইহুদির কাছে ৩০ সা গমের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছিল।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৩,৪০৯)
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুলকে যবের রুটি ও বাসি তরকারির দাওয়াত দিলেও তিনি গ্রহণ করতেন। তার একটি বর্ম বন্ধক ছিল এক ইহুদির কাছে। জীবদ্দশায় তিনি আর সেটা ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারেননি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,০৬৯)
মৃত্যুর সময়ে আল্লাহর রাসুলের লৌহবর্মটি এক ইহুদির কাছে ৩০ সা গমের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছিল।হজরত আয়েশা (রা.), মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৩,৪০৯
সাহাবিরা থাকতে নবীজি (সা.) কেন এক ইহুদির সাথে লেনদেন করলেন? উত্তর হলো এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে:
১. অমুসলিমদের সাথে লেনদেনের বৈধতা বোঝানো।
২. হয়তো তখন কোনো সাহাবির কাছেই নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু ছিল না।
৩. এই আশঙ্কা ছিল, সাহাবিদের সাথে লেনদেন করলে তারা কোনো মূল্য বা বিনিময় গ্রহণ করবেন না। তাই তিনি তাদেরকে ভোগান্তিতে ফেলতে চাননি। কেননা এটা অসম্ভব নয় যে, সাহাবিদের অনেকেরই ৩০ সা যব বা তার চেয়েও বেশি দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল। তিনি তাদেরকে ব্যাপারটা জানতে পর্যন্ত দেননি। যারা গরিব ছিলেন, তারাই কেবল এটা জানতেন এবং পরবর্তীকালে তারাই এই হাদিস বর্ণনা করেছেন। (ইবনে হাজার আসকালানি,ফাতহুল বারি, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ১৪১-১৪২)
- মুজিব হাসান: লেখক, সম্পাদক। সূত্র: প্রথম আলো