প্রদর্শনী চলবে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত, সকলের জন্য উন্মুক্ত—
বিশ্ব ডাক দিবস প্রতি বছর (গতকাল) মানে ৯ই অক্টোবর পালিত হয়, যা ১৮৭৪ সালে সুইজারল্যান্ডের বের্ন শহরে বিশ্ব ডাক সংস্থার (ইউপিইউ) প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়। দেশেও পালিত হচ্ছে স্মৃতিময় এ দিবস। আজ শুক্রবার নবীন সংগ্রাহকদের জন্য কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকাশিত হবে একটি স্মারক ডাকটিকিট ও বিশেষ ডাকসামগ্রী।
একসময় মানুষ দূরের প্রিয়জনের হাতের লেখা চিঠির জন্য অপেক্ষা করত। খাম খুলে পড়ত কেউ হাসি, কেউ চোখে জল নিয়ে। সেই চিঠির সঙ্গে যুক্ত ছিল এক টুকরো রঙিন ইতিহাস—ডাকটিকিট। প্রযুক্তির উৎকর্ষে চিঠির ব্যবহার আজ প্রায় বিলুপ্ত, তবে কিছু শৌখিন মানুষ এখনও পরম মমতায় বাঁচিয়ে রেখেছেন ডাকটিকিটের জগৎ।
ঢাকার আগারগাঁওয়ের ডাক ভবনটি এই তিন দিন ধরে সেই সব মানুষের মিলনমেলার স্থান হয়ে উঠেছে। বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে নিচতলায় চলছে বিশেষ ডাকটিকিট প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং দেশের প্রাচীনতম ফিলাটেলি সংগঠন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফিলাটেলিক অ্যাসোসিয়েশন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৫৩ জন সংগ্রাহক তাদের অমূল্য সংগ্রহ ৬৪টি ফ্রেমে সাজিয়ে দর্শনার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি ফ্রেম যেন আলাদা এক পৃথিবী। সিনেমা, খেলাধুলা, পশুপাখি বা পতাকা—ডাকটিকিটের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য।
তিনটি ফ্রেমে দেখা যায় বিশ্বের নোবেলজয়ীদের নিয়ে প্রকাশিত ডাকটিকিট। ‘নোবেল পুরস্কারের ৭৫ বছর’ শিরোনামে এটি সাজিয়েছেন চিনু সাহা। অন্যদিকে এডওয়ার্ড তরুণ রায় প্রদর্শন করেছেন বিশ্বের প্রথম তিনটি বিরল ডাকটিকিট—যুক্তরাজ্যে ১৮৪০ সালে প্রকাশিত কালো ‘পেনি ব্ল্যাক’, নীল ‘ব্লু পেনি’ এবং লাল ‘রেড পেনি’। ফ্রেমে রয়েছে প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো খাম, যা সময়ের সাক্ষী।
আন্তর্জাতিক বিষয়েও রয়েছে বৈচিত্র্য—‘বিশ্বের মিলিটারি টিকিট’, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, মহাত্মা গান্ধী, অ্যানিমেশন, রেড ক্রিসেন্ট, রোটারি মুভমেন্ট ও রিফিউজি রিলিফ সংক্রান্ত ডাকটিকিট প্রদর্শন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বিষয়ভিত্তিক ডাকটিকিটের প্রদর্শনীও আকর্ষণীয়। রিফা রাফিয়া ইসলাম ‘সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ’, মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন ‘৭১–এর গণহত্যা’, মোস্তাফিজুর রহমান ‘বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব’—সব মিলিয়ে দেশীয় গৌরবের গল্প ফুটে উঠেছে।
উনিশ শতকের ফিসক্যাল টিকিট প্রদর্শন করেছেন সাইফুল ইসলাম। আবু জাফর জুয়েল দেখাচ্ছেন ‘বাংলাদেশের এরোগ্রাম’, লস্কর ইফতেখার হোসাইন ও মাহিরা হাসান চিঠির খাম। সরকার রেজায়া রাব্বি তুলে ধরেছেন ডাকঘরের রেজিস্টার্ড সিলমোহর ও ডাকমোহরের শ্রেণিবিন্যাস।
প্রদর্শনীর কেন্দ্রবিন্দু বিশ্ব ডাক দিবস। হিমেল মার্ক রোজারিও দেখাচ্ছেন বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৫০ বছর উপলক্ষে প্রকাশিত ডাকটিকিট, আর শামসুল আলম একই উপলক্ষে এশিয়ার ডাকটিকিটের সংগ্রহ প্রদর্শন করছেন।
উদ্বোধনী দিনে উপস্থিত ছিলেন ডাকটিকিট নকশাকার মুসলিম মিয়া এবং দেশের বরেণ্য ফিলাটেলিস্টরা। আজ শুক্রবার নবীন সংগ্রাহকদের জন্য কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকাশিত হবে একটি স্মারক ডাকটিকিট ও বিশেষ ডাকসামগ্রী।
প্রদর্শনী চলবে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত, সকলের জন্য উন্মুক্ত।
চিঠির যুগ হয়তো শেষ হয়ে এসেছে, তবে ডাকটিকিটের রঙিন জগৎ এখনও বলে দেয়—একসময় ছোট্ট খামের কোণে লেগে থাকা একটি টিকিটই বয়ে আনত ভালোবাসা, সংবাদ এবং পৃথিবীর নানা গল্প।