নতুন রূপে ফিরেছে কভিড ও ডেঙ্গু। এত দিন ডেঙ্গু রোগীদের প্রধান উপসর্গ ছিল প্রচণ্ড জ্বর, গিরায় গিরায় ব্যথা, গলা ব্যথা ও কাশি। এ বছর ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে জ্বর, গিরা ও গলা ব্যথার তীব্রতা অনেকটা কম। সবার ক্ষেত্রে কাশিও থাকে না। এর বদলে দেখা যাচ্ছে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা।
ঠিক একইভাবে বদলে গেছে কভিড। হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা ও প্রচণ্ড জ্বর ছিল কভিডের প্রধান উপসর্গ। এখন আক্রান্তদের মধ্যে জ্বরের তীব্রতা কম থাকে, শ্বাসকষ্টও হয় না সবার।
তবে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরেরও মৌসুম এটি। তাই জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হলে অনেকেই মনে করে ইনফ্লুয়েঞ্জা। ফলে অনেক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ঘরে বসে থাকছে, তাতে জটিলতার আশঙ্কা বাড়ছে।
শুরুতেই চিকিৎসা না নেওয়ায় রোগের প্রকোপ বেড়ে জটিল সব উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। রোগীর পরিচর্যায় প্রয়োজন হচ্ছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। আইসিইউ অপ্রতুলতায় সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ডেঙ্গু ও কভিড মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।
ইদানীং এমন অনেক রোগী হাসপাতালে আসছে, যারা একই সঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শরীর ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলে গুরুত্ব দিতে হবে, হতে পারে দুটি রোগই একসঙ্গে দেখা দিয়েছে।
কভিড এবং সাধারণ ফ্লু দুটিই ভাইরাসজনিত রোগ। সংক্রমণ ছড়ায় পরস্পরের সংস্পর্শে, সর্দি ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। পরিস্থিতি মারাত্মক হলে দুটির ক্ষেত্রেই নিউমোনিয়া হতে পারে। বয়স্ক, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের জন্য ফ্লু ও কভিড দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ। ফ্লুর তুলনায় কভিডে জটিলতা বেশি। নিউমোনিয়ার ঝুঁকি তো আছেই, কভিডের মারাত্মক জটিল উপসর্গের মধ্যে আছে হঠাৎই রক্তে অক্সিজেন কমে জমাট বেঁধে যাওয়া, যা হতে পারে প্রাণঘাতী।
করোনাভাইরাস ছড়ায় দ্রুত। উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই ফ্লুর মতো উপসর্গ হলেও কভিড পরীক্ষা করাতে হবে। এ রোগে প্রথমে মৃদু জ্বর থাকে। সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকলে জ্বর ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। জ্বর দীর্ঘমেয়াদি হলে ফুসফুসে নিউমোনিয়া হতে পারে।
শুকনা কাশি, কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম কভিড সংক্রমণের লক্ষণ। এতে ফ্লুর মতো হাঁচি, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া ততটা দেখা যায় না। সারা গায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, তীব্র অবসাদও থাকতে পারে।
করোনায় সাধারণত উপসর্গ দেখা দেওয়ার আট থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। আবার কারো কারো শ্বাসকষ্ট তেমন তীব্র অনুভূত না হলেও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। যদি সর্দিকাশি ও জ্বর দেখা দেয়, তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে বিশ্রাম নিন। উপসর্গ দেখা দেওয়ার দু-তিন দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করান। দূরত্ব বজায় রাখুন। পুষ্টিকর সহজ পাচ্য খাবার খান। অক্সিজেনের মাত্রা মাপুন। জ্বর বাড়লে, অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট হলে, রক্তচাপ কমে গেলে কিংবা অক্সিজেনের মাত্রা ৯২ শতাংশের নিচে চলে গেলে রোগীকে হাসপাতালে নিন।
কিছু সচেতনতায় করোনা ও ফ্লু প্রতিরোধ করা যায়; যেমন- মাস্ক পরা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি।
ডেঙ্গুও ভাইরাসজনিত রোগ। এতে জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা থাকে। এমন হলে করোনা ও ডেঙ্গু- দুটিই পরীক্ষা করা উচিত। একই রোগী করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর চার-পাঁচ দিন পরে শরীরে লাল র্যাশ হতে পারে। রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যেতে পারে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ‘শক সিনড্রোম’ রোগীর মৃত্যুর কারণ। কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলো থাকলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। নাক বা দাঁত দিয়ে রক্তপাত, কালো পায়খানা, নারীদের মাসিকের অতিরিক্ত রক্তপাত বা হঠাৎ মাসিক।
তিনটি রোগের লক্ষণ কাছাকাছি হওয়ায় এই মৌসুমে জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নইলে প্রাণঘাতী জটিলতা দেখা দিতে পারে।
- লেখক: মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড, শ্যামলী, ঢাকা। সূত্র: কালের কন্ঠ