গার্ডিয়ান ও আনাদোলু এজেন্সি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, রাশিয়ায় হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও দেশটির পারমাণবিক নীতিতে পরিবর্তনের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন।
বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ার শঙ্কায় বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে দর পতন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত বন্ডের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক হাজার দিন অতিক্রম করেছে। এতে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ার কারণে ইউরোপের পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অঞ্চলটির অন্যতম প্রধান পুঁজিবাজার স্টক্স৬০০ সূচক ১ শতাংশের বেশি কমে আগস্টের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে।
ব্রিটেনের এফটিএসই১০০ সূচক গত মঙ্গলবার বিকালে দশমিক ৫ শতাংশ কমে তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ৮ হাজার ৭০ পয়েন্টের কাছাকাছি পৌঁছে।
নিউইয়র্কের শেয়ারবাজারেও পতন দেখা গেছে। ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ সূচক দশমিক ৮ শতাংশ ও এসঅ্যান্ডপি৫০০ সূচক দশমিক ৪ শতাংশ কমে গেছে। ওয়াল স্ট্রিটের ফিয়ার ইনডেক্স হিসেবে পরিচিত সিবিওই ভোলাটিলিটি ইনডেক্স প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে।
সিটি ইনডেক্স ও ফরেক্স ডটকমের বাজার বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাজাকজাদা বলেন, ‘ইউক্রেন কর্তৃক মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা বিচলিত হয়েছেন, যা ইউরোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এ মুহূর্তে বড় উদ্বেগ হলো রাশিয়া কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নতুন পারমাণবিক নীতিমালা অনুমোদন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শর্তগুলোকে সহজ করেছে। এর মধ্যে রাশিয়ার ভূখণ্ডে প্রচলিত বড় আকারের হামলার প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি অচিন্তনীয়। কিন্তু আমরা খুব বিপজ্জনক পরিস্থিতির কাছাকাছি চলে যাচ্ছি।’
জেফারিসের গ্লোবাল এফএক্সের প্রধান ব্র্যাড বেখটেল বলেন, ‘সরাসরি প্রভাব না ফেলা পর্যন্ত বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে ভূরাজনৈতিক বিষয় গুরুত্ব পায় না। কিন্তু এবারে মার্কিন অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানো হয়েছে। আবার রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।’
এদিকে বাল্টিক সাগরে দুটি আন্ডারসি কেবল রহস্যজনকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের কারণে বাজারে যে উত্থান দেখা গিয়েছিল তা ম্লান হয়ে গেছে। তার উচ্চ শুল্কারোপ ও অবৈধ অভিবাসীদের গণহারে নির্বাসনের প্রস্তাব কিছু শিল্পে বিঘ্ন ঘটাতে এবং পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে পাউন্ডের বিনিময় হার ডলারের বিপরীতে এক-তৃতীয়াংশ সেন্ট কমে ১ ডলার ২৬ সেন্টে নেমেছে। ইউরোর বিনিময় হার সুইস ফ্রাঙ্ক ও ডলারের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে।
মঙ্গলবার রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের বিনিময় হার দশমিক ৮২ শতাংশ কমে, যা এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রতি ডলার ১০০ দশমিক ৫ রুবলে গিয়ে পৌঁছেছে, যা গত বছরের অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন।
এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোজোনের সরকারি বন্ড নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর ফলে বন্ডের সুদহার বা ইল্ড কমেছে।

