ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) শেয়ারবাজারে সরকারি মালিকানাধীন এবং বহুজাতিক কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে। এ বিষয়ে সংগঠনটি মঙ্গলবার তাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
ডিবিএ’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই চিঠিটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। যেখানে বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজার নানা অনিয়ম, অপশাসন এবং অস্থিরতার শিকার হয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে বহু প্রতিষ্ঠান কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত রিটার্ন কমে যাওয়ার পাশাপাশি মূলধনও হ্রাস পেয়েছে যার ফলে বাজার প্রায় ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিশেষ করে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির কারণে বাজারে মারাত্মক আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলা হয়। ২০২০ সালে করোনা মহামারি এবং পরে প্রায় ২০ মাস ধরে শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা চালু রাখার ফলে বাজারের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়। এসব কারণে আন্তর্জাতিক তহবিল ব্যবস্থাপকরা বাংলাদেশ থেকে দূরে সরে গিয়েছে এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীদেরও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, মানহীন আইপিও তালিকাভুক্ত করাও বাজারের জন্য অন্যতম বড় অনিয়ম। এসব আইপিওর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে তারল্য সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পরিচালনাকারী সংস্থা, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বাজার মধ্যস্থতাকারী, আর্থিক নিরীক্ষক এবং রেটিং এজেন্সির মধ্যে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার নেতৃত্বে আমরা এই সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণ চাই। অন্যথায় বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং শিল্পায়নের জন্য মূলধন সংগ্রহের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।’
চিঠিতে আরো বলা হয়, বাজারে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অবশ্যই মানসম্পন্ন আইপিও আনতে হবে। পাশাপাশি, নতুন পণ্য ও কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করলে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এছাড়া দেশে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানে সরকারের অংশীদারিত্ব রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার অফলোড করারও সুপারিশ করেছে ডিবিএ। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হবে বলে মনে করে সংগঠনটি।

