পুঁজিবাজারে বড় ধরনের অর্থ আত্মসাতের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় অভিযোগ রয়েছে, মাত্র ৮৭ কোটি টাকা মূল্যমানের একটি জমিকে অবৈধভাবে ১ হাজার ২০ কোটি টাকায় মূল্যায়ন করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৮০০ কোটি টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতসহ ৩০ জনকে আসামি করা হচ্ছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন এজাহারভুক্ত এই মামলাটি দায়ের করবেন বলে জানা গেছে। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পরের সঙ্গে যোগসাজশ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং প্রতারণা, জালিয়াতি ও জাল দলিলের আশ্রয় নিয়েছেন। যথাযথ নিয়ম মেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) প্রতিবেদন সংগ্রহ না করে, প্রস্তাবিত মর্টগেজ সম্পত্তি সরেজমিনে যাচাই বা মূল্য নির্ধারণ না করে জমিটির অস্বাভাবিক অতিমূল্যায়ন করা হয়। মূলত ৮৭ কোটি টাকা মূল্যমানের একটি জমিকে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা দেখানো হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এই অতিমূল্যায়নের ভিত্তিতে একটি সদ্য গঠিত, অনভিজ্ঞদের মালিকানাধীন কথিত কোম্পানির নামে বন্ড ইস্যু করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এই কোম্পানির নাম ‘শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড’। প্রাপ্ত অর্থ কোম্পানির চলতি হিসাবে জমা হওয়ার পর, সেখান থেকে ২০০ কোটি টাকা এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট) হিসেবে রাখা হয় এবং বাকি ৮০০ কোটি টাকা বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
এরপর কোনো প্রকার ব্যাংকিং নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে নগদ উত্তোলন ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। পরবর্তীতে আত্মসাৎকৃত অর্থ বিভিন্ন পদ্ধতিতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ‘লেয়ারিং’ প্রক্রিয়ার মধ্যে ফেলে অর্থপাচারের চেষ্টা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউজ্জামান ও পরিচালক তিলাত শাহরিন; আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহ আলম সারোয়ার, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, রাবেয়া জামালী, এআরএম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, গোলাম মোস্তফা ও মো. জাফর ইকবাল।
তালিকায় আরও রয়েছেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম, সাবেক কমিশনার রুমানা ইসলাম, মিজানুর রহমান, শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও মো. আবদুল হালিম।
আইএফআইসি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ক্রেডিট অফিসার সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, হেড অব লোন পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট শাহ মো. মঈনউদ্দিন, চিফ বিজনেস অফিসার (রিটেইল) মো. রফিকুল ইসলাম, চিফ বিজনেস অফিসার (করপোরেট) গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত, চিফ অব আইটি মো. নুরুল হাসনাত, চিফ ইনফর্মেশন অফিসার মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, ধানমন্ডি শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক নাজিমুল হক, প্রিন্সিপ্যাল ব্রাঞ্চের সাবেক ব্যবস্থাপক হোসাইন শাহ আলী এবং রিলেশনশিপ ম্যানেজার সরদার মো. মমিনুল ইসলাম।
এছাড়া, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সিইও নিমাই কুমার সাহা ও কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান; আইএফআইসি ব্যাংকের প্রিন্সিপ্যাল ব্রাঞ্চের সাবেক ব্রাঞ্চ অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার ও বর্তমানে সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার (এসপিও) আয়েশা সিদ্দিকা এবং ধানমন্ডি শাখার সাবেক কমপ্লায়েন্স অফিসার ও বর্তমানে গুলশান শাখার এফএভিপি সিলভিয়া চৌধুরীকেও আসামি করা হচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনায় দেশের আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারে আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মামলার অগ্রগতি ও তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আরও তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

