টানা দরপতনের পর অবশেষে একটু স্বস্তি ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজারে। বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে বাজারে। আগের দিনের বিশাল পতনের বিপরীতে সূচক বেড়েছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক সপ্তাহের শেষ দিনে বেড়েছে ৯৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট, যা শতাংশে প্রায় ২ দশমিক ২৭।
বুধবার সূচক কমেছিল প্রায় ১৫০ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ। তখন ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাকে দায়ী করা হয়েছিল এই পতনের জন্য। তবে আজকের উত্থান বাজারে নতুন করে কিছু আশা জাগিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘুরে দাঁড়ানোকে ‘কাউন্টার মুভ’ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ, দীর্ঘদিনের নিম্নমুখী প্রবণতার মাঝে একটি ক্ষণস্থায়ী উল্টো দিকের গতি।
বাজারে অনেকেই মনে করছেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সাহস পেয়েছেন। তবে অনেকের মতে, বাংলাদেশের বাজারে এই সংঘাতের সরাসরি প্রভাব নেই।
তাদের মতে, বাজারের মূল সমস্যা এখন আস্থার সংকট। বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত নন। সেই কারণে সামান্য গুজবেও তারা ভয় পেয়ে যান, বিক্রি বাড়িয়ে দেন।
গতকাল বাজার কিছুটা ইতিবাচক হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতার ইঙ্গিত দেয় না। বরং অনেকে মনে করছেন, রোববারের (১১ মে) এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের প্রভাবেই বাজারে এই পরিবর্তন এসেছে।
সেদিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে পুঁজিবাজার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসছে।
বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, ওই বৈঠক থেকে কিছু ভালো সিদ্ধান্ত আসবে। বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর মতো উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, “গতকাল বাজারে পতন হয়েছিল আবেগের বশে। আজ সেই ভুল থেকে ফিরে এসেছেন অনেকে।”
একই কথা বলেছেন ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ।
তারা বলছেন, গতকালের মতো বড় পতনের পর সাধারণত বাজারে এক ধরণের বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একে ‘কাউন্টার মুভ’ বলা হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো শেয়ারের দাম যদি একটানা কমে ৭০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় নামে, এরপর হঠাৎ ৫৫ টাকায় উঠে আবার কমে যায়—এই ওঠাটাকেই বলে ‘কাউন্টার মুভ’।
এটা স্বল্পমেয়াদী। দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই একে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত বলা ঠিক হবে না।
তবে এই সময়টায় অনেক বিনিয়োগকারী বাজারে প্রবেশ করেন। কেউ কেউ আবার স্বল্পমেয়াদি লাভও তুলে নেন।
ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, “বাজার পড়েছে যুদ্ধের কারণে—এই যুক্তি ঠিক নয়। বিনিয়োগকারীরা বাজারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই ছোট ইস্যুতেই ভয় পেয়ে বিক্রি বাড়িয়ে দেন।”
তিনি বলেন, “রোববারের বৈঠকের খবরে হয়তো কিছুটা স্বস্তি এসেছে। তবে এটিকে স্থায়ী পরিবর্তন ভাবার সুযোগ নেই।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই বৈঠকে বিএসইসি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরাও থাকবেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
তবে বাজারে আস্থা ফেরাতে হলে শুধু আলোচনায় হবে না। দরকার কার্যকর পদক্ষেপ।
সবার নজর এখন আগামী রবিবারের বৈঠকে। সেখান থেকে বাজারকে ঘিরে কী বার্তা আসে, সেটাই নির্ধারণ করবে পরবর্তী দিকনির্দেশনা।

