দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা দুই কার্যদিবস ধরে সূচকের পতন চলছে। গত দুই দিনে সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৪৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে গেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট ও বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারে দরপতনের ফলে এই পতনের প্রবণতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত শনিবার ডিএসইএক্স অবস্থান করছিল ৪ হাজার ৮২০ পয়েন্টে। পরদিন থেকে সূচকের ধস শুরু হয় এবং গতকাল সোমবার দিন শেষে সূচক ৪৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে। আগের কার্যদিবসে এ সূচক ছিল ৪ হাজার ৭৯১ পয়েন্ট। নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৮ পয়েন্ট, যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৭২ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএস সূচক ৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২ পয়েন্টে।
বিশ্লেষণে আরও জানা যায়, সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও গ্রামীণফোনের শেয়ারদর পতন।
ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৭টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১২১টির কমেছে ২০০টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৭৬টি সিকিউরিটিজের দর। লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় সামান্য কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৯২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল লেনদেনে শীর্ষে ছিল ব্যাংক খাত, যা মোট লেনদেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাত, যার লেনদেন ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড খাত, যার লেনদেন ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়ে ওষুধ ও রসায়ন খাত এবং ১০ দশমিক ৩ শতাংশ লেনদেন নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক পণ্য খাত।
দিন শেষে দেখা গেছে, বাজারের অধিকাংশ খাতেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। পাঁচটি খাত ছাড়া বাকি সবখাতে দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৮ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন হয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে। কাগজ ও মুদ্রণ এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতেও ১ দশমিক ৪ শতাংশ করে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। তবে বস্ত্র খাত ১ দশমিক ৮ শতাংশ, সিরামিক খাত ০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাত ০ দশমিক ৭ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন অর্জন করেছে।
বাজার পরিস্থিতি, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো ও প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিয়ে গতকাল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজার উন্নয়নে যে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোর বাস্তবায়ন পরিকল্পনা, দায়িত্ব বণ্টন ও অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, তার অধিকাংশই আমাদের কাজ নয় বরং তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। কে কীভাবে দায়িত্ব নেবে, বাজেট সামনে রেখে স্টেকহোল্ডারদের দাবি কিভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা এসব পর্যালোচনা করছেন এবং কীভাবে অগ্রসর হতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “কিছু গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে যে আমি পদত্যাগ করেছি অথচ সেটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি এখানে এসেছি প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া পাঁচ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের আলোচনায় অংশ নিতে। কিন্তু কেউ কেউ তা নিয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে যেটি অনভিপ্রেত।”
চলমান পরিস্থিতিতে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নীতিনির্ধারকদের এমন উচ্চপর্যায়ের বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজার বিশ্লেষকেরা। তবে বাস্তবায়নপর্বে সময়ক্ষেপণ ও সমন্বয়হীনতা থাকলে তার প্রভাব পড়বে বাজার আস্থার ওপর বলেও মনে করা হচ্ছে।

