দেশের অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) চেয়ারম্যান ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী।
গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
তপন চৌধুরী বলেন, “অনেক মানুষ সারা জীবনের সঞ্চয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু বাজারের অস্থিরতায় অনেকেই তাদের সবকিছু হারিয়েছেন। এই অবস্থা যেন ভবিষ্যতে আর না হয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।” তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীদের অনেকে কোম্পানির ব্যালান্স শিট বুঝতে পারেন না। তাদের জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার যাঁরা কিনেছিলেন, তাদের স্যামসন এইচ চৌধুরী বিনামূল্যে স্কয়ার টেক্সটাইলের শেয়ার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার বাধা দেয়। পরে তিনি আদালতের মাধ্যমে সেই শেয়ার বিতরণ করেন।” স্কয়ার ফার্মার বাজারমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একসময় আমাদের কোম্পানির মূল্য ছিল ৯০ কোটি টাকা। এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। এতে বিনিয়োগকারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “সংস্কার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এটি বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ো চলে না। প্রতিটি সংস্কারের মধ্যেই কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকে। রাজনীতির চোখে দেখলে চলবে না।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশীরা সৌভাগ্যবান, বারবার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি। তাই সময় না দিলে সংস্কার সফল হবে না। ব্যর্থ সংস্কারের পরিণতি ভালো হয় না।”
পুঁজিবাজারের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, অতীতে কোনো সরকারই ক্যাপিটাল মার্কেটকে মূলধারায় এনে অর্থনীতি মজবুত করার চেষ্টা করেনি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন।” নেগেটিভ ইক্যুইটির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি সমাধানে সবার কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করা হবে।”
ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আইসিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আক্তারসহ অনেকে। বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, “পুঁজিবাজারে সংস্কারের কাজ চলছে। আমরা মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও মার্জিন রুলস প্রণয়ন করছি। আইন প্রণয়ন শেষ হলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংস্কার সম্পন্ন হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের কাজ বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা, সূচক ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ নয়। নীতিমালা তৈরি এবং সেগুলোর কার্যকারিতা মনিটর করাই আমাদের দায়িত্ব। গত ১৫ বছরে কীভাবে পিছিয়ে পড়েছি, তা সবার জানা। ১০ কোটি টাকার কোম্পানি ২৭৫ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। আমরা সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করছি। এখন কোথায় আছি এবং সামনে কী করব, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগোচ্ছি।”

