গত আগস্ট মাসে দেশের পুঁজিবাজারে সামান্য চাঙাভাব দেখা গেছে। উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকে উত্থান এবং লেনদেনে গতিশীলতা বেড়েছে। তবে এই সময়ে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা কমেছে প্রায় ২ হাজার। আরও বড় উদ্বেগের বিষয়, শেয়ার শূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজারের বেশি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে ভালো হবে। অন্তবর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশি-বিদেশি বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এসব কোম্পানি বাজারে আসলে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়বে। সম্প্রতি বিএসইসি বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের বার্ষিক ফি কমিয়েছে। এখন বছরে মাত্র ১৫০ টাকা দিয়ে বিও হিসাব চালু রাখা সম্ভব। এতে বিও হিসাব বন্ধের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসবে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ফি আগে ৪৫০ টাকা ছিল। এটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর জন্য বোঝা ছিল। কম লেনদেন করা অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে দিতেন। এখন তা কমে আসবে। বিও হিসাব বাড়বে। এটি ব্রোকারেজ হাউজগুলোকেও টিকিয়ে রাখবে।’
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্যানুযায়ী, ৩১ জুলাই পুঁজিবাজারে মোট বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ২৪৮টি। ৩১ আগস্টে এটি কমে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪০১টি হয়েছে। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ৯৪৭টি। আগস্টে শেয়ার থাকা বিও হিসাবের সংখ্যা ১২ লাখ ৮ হাজার ১৫টি। এসব হিসাবের মোট শেয়ার ও ইউনিটের বাজার মূল্য ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। শেয়ার শূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ৩১ আগস্টে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৮৫৯টি। জুলাই শেষে যা ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৯১টি। অর্থাৎ মাসে শেয়ার শূন্য হিসাব বেড়েছে ৩ হাজার ৬৮টি। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ারের দাম বাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন। গত দুই মাসে বেশ কিছু শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলেছেন। এর ফলে অনেক বিও শেয়ার শূন্য হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক পরিচালক বলেন, ‘বাজার ভালো হলেও অনেক সময় শেয়ার কেনা যায় না। বিশ্লেষণ করে পরে কিনতে হয়। বরং মন্দা বাজারে কিনলে লাভের বেশি সুযোগ থাকে। অনেকে হয়তো হাতে থাকা সব সিকিউরিটিজ বিক্রি করে দাম কমার অপেক্ষায় আছেন।’ সিডিবিএলের তথ্যানুযায়ী, আগস্ট শেষে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪০১টি বিও হিসাবের মধ্যে পুরুষ হিসাবের সংখ্যা ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮টি। জুলাই শেষে সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৫টি। অর্থাৎ মাসে পুরুষ বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ১১৭টি। একই সময়ে নারী বিও হিসাব ৩ লাখ ৯২ হাজার ৭৩৮টি থেকে কমে ৩ লাখ ৯১ হাজার ৯৭১টি হয়েছে।
দেশি বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব আগস্টে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ১০৮টি। বিদেশি হিসাব ৪৩ হাজার ৭৬১টি। জুলাইতে দেশি হিসাব ছিল ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি, বিদেশি হিসাব ৪৪ হাজার ৫৫৩টি। অর্থাৎ দেশি ও বিদেশি উভয় বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে।