ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান-উর-রহমান মন্তব্য করেছেন, দেশের বর্তমান পুঁজিবাজারে কোনো মৌলিক শক্তিশালী কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে না।
তিনি বলেন, “আইন প্রয়োগ ও বিনিয়োগকারীর আস্থা তৈরিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অতীত ও বর্তমান কমিশনই কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।” গতকাল মঙ্গলবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশ (পিআরআই) এবং অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ (ডিএফএটি) যৌথভাবে আয়োজিত মাসিক ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই) সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর বনানীতে পিআরআইয়ের অফিস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। রিজওয়ান-উর-রহমান আরও বলেন, “বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে মূলধন সংগ্রহে পুঁজিবাজারের কোনও ভূমিকা নেই। বিনিয়োগকারীর আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দরকার বিশ্বস্ত নেতৃত্ব ও সুশাসন।”
অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের এই সমস্যার জন্য ১৯৯২ সালের একটি সিদ্ধান্তকেও দায়ী করেন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, “ওই সময় তফশিলি ব্যাংকগুলিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এটি একটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ ছিল, যা পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।” ব্যাংক নির্ভরতা কমানো না হলে দেশের উন্নয়নও অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) তথ্যমতে, দেশের পুঁজিবাজার থেকে ব্যবসায়িক মূলধন সংগ্রহের হার বার্ষিক চাহিদার এক শতাংশেরও কম। গত ১৬ বছরে প্রায় ১৫০টি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) থেকে কোম্পানিগুলো মাত্র ১১ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। তুলনায় দেশের প্রথম সারির একটি তফশিলি ব্যাংক প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিচ্ছে।
অন্যদিকে, দেশের পুঁজিবাজারের বাজার মূলধনও ক্রমহ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান জিডিপির অনুপাতে এটি মাত্র ৭.২ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ৪০ শতাংশ ছিল। অর্থনৈতিক সংকটের শ্রীলঙ্কাতেও জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধন ২২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। পার্শ্ববর্তী ভারতেও জিডিপির চেয়ে বাজার মূলধন বেশি, যেখানে পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে কোটিপতির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।