২০২৪ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) টেকনো ড্রাগস কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। এরপর গত ১৭ মাসে কোনো কোম্পানিই প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের অনুমতি পাননি।
এ পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায়, বাজারে আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনের প্রবণতা বর্তমানে স্থবির অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। চলতি বছরের মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি কয়েকটি স্পষ্ট নির্দেশনা দেন। তার মধ্যে রয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিতে (এমএনসি) থাকা সরকারি শেয়ার বিক্রি করা এবং দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা। এছাড়া বড় কোম্পানিগুলো যাতে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছাড়িয়ে মূলধন সংগ্রহে আগ্রহী হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। তবে এই নির্দেশনার পরও বাজারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
একটি বড় বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী (সিইও) বলেন, “স্টক মার্কেটের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদ থেকে আসে। খোলাখুলি বললে, এখন এমন কোনো পরিকল্পনা নেই এবং আমরা এর কোনো প্রয়োজনই দেখছি না।” ১৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান (এসওই) বাজারে আনার সরকারি প্রচেষ্টা বর্তমানে স্থবির হয়ে গেছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসায় এ ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
২০২৪ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) টেকনো ড্রাগস কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছিল। এরপর গত ১৭ মাসে কোনো কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের অনুমতি পাননি। শেখ হাসিনা সরকারের পর বিএসইসির দায়িত্ব নেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজার সংস্কারের কথা বলে এক ডজনেরও বেশি কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করা হয়। এর ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকাররা নতুন কোনো আইপিও জমা দেয়নি। আইপিও পাইপলাইন শূন্য হয়ে যাওয়ায় নতুন কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়াও সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থা নজিরবিহীন। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২৬টি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন করেছিল। গত ১৫ বছরে গড়ে অন্তত ১০টি কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করেছে।
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিলেও বিগত ১৪ মাসে নতুন কোনো কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে দেড় বছর ধরে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন একদম বন্ধ রয়েছে এবং নতুন শেয়ারের যোগান নেই। আইপিওর ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বিএসইসির স্থগিত সংস্কার এজেন্ডা, বিশেষ করে পাবলিক ইস্যু রুলসের সংশোধনের দীর্ঘ বিলম্বকে এই অচলাবস্থার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন। জ্যেষ্ঠ এক ব্যাংকার বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংস্কার ও স্বচ্ছতার কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে বাজার যেন স্থবির। নতুন নিয়ম-কানুন কেমন হবে তা কেউ জানে না। আর কেউই প্রথম সেগুলো পরীক্ষা দিতে চাইছে না।”
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা:
২০২৪ সালের আগস্টে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজার সংস্কারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগসহ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কাজ চলছে।” এর বাইরে তিনি কিছু বলতে চাননি। সূত্রে জানা গেছে, দেশের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) উল্লেখযোগ্য শেয়ার বা মালিকানা রয়েছে।
বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান বলেন, “সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা চলছে। সব কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং আলাদা আলাদাভাবে সভাও করছি। আমরা ভাবছি, কীভাবে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আনা যায়।” তিনি কেমন সাড়া পাচ্ছেন তা জানতে চাইলে বলেন, “মিক্সড। কেউ ভালো সাড়া দিচ্ছে, কেউ কম। আমরা চেষ্টা করছি এবং আশা করছি, সরকারি নির্দেশনা মেনে তারা পুঁজিবাজারে আসবে।”
বিদ্যুৎ খাতের এক কোম্পানির কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোম্পানিটি তালিকাভুক্তিতে মোটামুটি প্রস্তুত। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে তারা পুঁজিবাজারে যেতে আগ্রহী। তবে এখনো মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। আগস্ট মাসে সরকার বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে একটি যৌথ বৈঠকও করেছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে কোম্পানিগুলোকে জানানো হয়, দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোগগুলোর সরকারের নিজস্ব শেয়ার ৫ শতাংশ এবং বিদেশি অংশীদারদের শেয়ার ৫ শতাংশ বিক্রি (অফলোড) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ১৬ অক্টোবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) টেক্সটাইল খাতের কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমই’র সঙ্গে বৈঠক করে। এর আগে ডিএসই ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)-র সঙ্গেও বৈঠক করেছে। এছাড়া ওষুধ শিল্পখাতের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাথেও বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এসব উদ্যোগে কোনো দৃশ্যমান ফলাফল দেখা যায়নি।
গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সঙ্গে এক সভায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানির (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট রুপালী চৌধুরী বলেন, ভালো কোম্পানিগুলো কেন পুঁজিবাজারে আসে না। তিনি উল্লেখ করেন, “আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন অনেক সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশের সমতুল্য দেশগুলোতে মূলধন উত্তোলনে ৬-৮ মাস লাগে, কিন্তু বাংলাদেশে ২৪ মাসের বেশি সময় লাগে।” তিনি আরও বলেন, “তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিগুলোকে নানা বাধ্যবাধকতা মানতে হয়। পাশাপাশি ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ পাওয়ায় বড় উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হন না।”
মার্চেন্ট ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজার সংস্কারের কথা বলে এক ডজনেরও বেশি কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করে। কমিশন কিছু কোম্পানিকে আবেদন প্রত্যাহার করতে বলে, আবার কিছু কোম্পানিকে নতুন আইপিও জমা না দেওয়ার পরামর্শ দেয়। যার ফলে নতুন কোনো আবেদন জমা হয়নি।
একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের সব স্টেকহোল্ডারকে চোর মনে করছে। তাদের সঙ্গে দেখা করা যায় না। নতুন আইপিও জমা দিলে অনুমোদন পাবে কি না সেই শঙ্কায় কেউ আইপিও জমা দিচ্ছে না। বিগত সময়ে কিছু আইপিওতে ভুল বা অনিয়ম হতে পারে, তাদের শাস্তি হোক, কিন্তু আইপিও অনুমোদন বন্ধ করে শেয়ারের যোগান বন্ধ করা হয়েছে। ফলে বিগত সময়ে তালিকাভুক্ত হওয়া কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া বিনিয়োগযোগ্য ভালো শেয়ার নেই।” তিনি আরও বলেন, “কমিশনের দিক থেকে এক অনিশ্চয়তা এবং উদ্যোক্তারাও মূলধন উত্তোলনে আগ্রহী নয়। দেশের অস্থির পরিস্থিতিতে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ তো দূরের কথা, যা আছে তা নিয়েই সংকটে।” তবুও তিনি যোগ করেন, “কিছু উদ্যোক্তা এখনো মূলধন পেতে আগ্রহী। কমিশনের পাবলিক ইস্যু রুলস চুড়ান্ত হলে কিছু নতুন আইপিও আবেদন আসতে পারে।”
আইপিও অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনে পাবলিক ইস্যু রুলসে সংশোধন আনা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “বিদ্যমান পাবলিক ইস্যু রুলস অনুযায়ী উদ্যোক্তারা মূলধন উত্তোলনের জন্য আবেদন করতে পারত। কিন্তু কমিশনের হাতে কোনো আইপিও আবেদন না থাকায় অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়নি।” সরকারি কোম্পানি এবং দেশে পরিচালিত বহুজাতিক কোম্পানিতে থাকা সরকারি শেয়ার বিক্রি করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, “ভবিষ্যতে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে।”
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামও সম্প্রতি বলেন, সরকারি ও ভালো ব্যবসা করছে এমন দেশীয় কিছু কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, পাবলিক ইস্যু রুলসে যে সমস্যা রয়েছে, তা সংশোধন আনার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া ভালো কোম্পানিকে দ্রুত ও স্বল্প সময়ে তালিকাভুক্ত করার জন্য ‘গ্রিন চ্যানেল’ তৈরি করা হয়েছে।
রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিগত ১৫ বছরের অনিয়ম খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি এবং বাজার সংস্কারের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলনে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে টাস্কফোর্স পাবলিক ইস্যু রুলসের খসড়া বিধি-বিধান কমিশনে জমা দিলেও তা চূড়ান্ত করার আগে স্টেকহোল্ডারদের মতামত সংগ্রহের জন্য প্রকাশ করা হয়নি।
চলতি মাসে বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে, যে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৬ অর্থবছরে ৪.৮ শতাংশে উন্নীত হবে, যা আগের বছরের ৪ শতাংশের চেয়ে বেশি। ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে এটি আরও বেড়ে ৬.৩ শতাংশে পৌঁছাবে। এ থেকে বোঝা যায়, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশের অর্থনীতি গতি ফিরে পাচ্ছে। তবে পুঁজিবাজার সেই সঙ্গে এগোচ্ছে না। আগের অবস্থানেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফেরাতে নতুন আইপিও জরুরি:
পুঁজিবাজার সম্প্রসারণ ও গতিশীল করতে নতুন আইপিওর মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন খুবই জরুরি বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, “মূলধন উত্তোলন না হলে ধীরে ধীরে পুঁজিবাজার ড্রাই হয়ে যাবে। নতুন শেয়ারের যোগান না বাড়ায় বাজার আগাচ্ছে না। আগের অবস্থানেই ঘুরপাক খাচ্ছে।”
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মার্চ পর্যন্ত বিএসইসির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, “ওই সময় অনেক চেষ্টা করে কয়েকটি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। কারণ সচিবের দায়িত্ব থাকার কারণে অনেক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকলে সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা খুবই কঠিন।” তিনি আরও বলেন, “একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া বর্তমান অনিশ্চয়তা দূর করা সম্ভব নয়। একবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হলে উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য মূলধন সংগ্রহ করবেন।”
২০০৭-২০০৮ সালে তালিকাভুক্ত ২৬ কোম্পানি:
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কয়েকটি সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে ছিল— যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং তিতাস গ্যাস কোম্পানি। বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তালিকাভুক্ত ছিল— ব্র্যাক ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী, প্রিমিয়ার, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং এসিআই ফর্মুলেশন।
ওই সময়ে ৭টি বিমা কোম্পানি এবং ৬টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানও তালিকাভুক্ত হয়। এছাড়া ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের চারটি কোম্পানি, যার মধ্যে এসিআই ফর্মুলেশন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে পুঁজিবাজারে আসে। ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত হয় বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালেই তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে গ্রামীণফোন দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় মূলধনী কোম্পানি। বর্তমানে পুঁজিবাজারে মোট ১৯টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। এরপর আর কোনো সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসেনি।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে প্রায় ২০০ কোম্পানি তালিকাভুক্ত:
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদে তিন দফায় পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করে এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে। তবে ওই বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে সরকার পতিত হয়।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের বেশি সময়ের মেয়াদে প্রায় ২০০ কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং মূলধন উত্তোলন করেছে। তবে এই সময়ে কিছু আইপিওর ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন, বিশেষ কিছু গ্রুপকে সুবিধা দেওয়া এবং কারসাজির ঘটনা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

