বিজ্ঞানের অগ্রগতির ধারাবাহিকতায়, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি অবিশ্বাস্য আবিষ্কার করেছেন। তারা প্রথমবারের মতো দুটি তারাযুক্ত একটি নতুন ধরনের কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পেয়েছেন, যা আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় ৮ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। এ বছরের গবেষণার ফলাফল বিশ্বজুড়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, কারণ এতদিনের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, কৃষ্ণগহ্বরগুলোর সঙ্গে সাধারণত একটি তারার উপস্থিতি থাকে। কিন্তু নতুন এই কৃষ্ণগহ্বরটিতে দুটি তারার সংযোগ রয়েছে, যা নুতন করে কৃষ্ণগহ্বরের গঠন তত্ত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
গবেষণার বিস্তারিত বিবরণ অনুসারে, গাইয়া স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনাক্ত করা এই কৃষ্ণগহ্বরটি বর্তমানে ট্রিপল ব্ল্যাক হোল সিস্টেম হিসেবে পরিচিত। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল ভি৪০৪ সিগনি নামক এই সিস্টেমটি, যা বর্তমানে একটি তারাকে গ্রাস করছে। নতুনভাবে খুঁজে পাওয়া একটি দূরবর্তী তারা প্রতি ৭০ হাজার বছর পর ব্ল্যাক হোলটিকে প্রদক্ষিণ করছে, যা এধরনের কৃষ্ণগহ্বরের গতিবিধি ও গঠন সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করছে।
প্রাথমিকভাবে, ভি৪০৪ সিগনি সিস্টেমটিকে কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক হোল এবং গ্রাস করা তারার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন তৃতীয় নক্ষত্রের আবিষ্কার এই সিস্টেমটিকে ট্রিপল ব্ল্যাক হোল হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে, যা ব্ল্যাক হোলের গঠন এবং বিবর্তন নিয়ে আমাদের ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করছে। বিজ্ঞানীদের মতে, নতুন এই সিস্টেম ব্ল্যাক হোল তৈরির পদ্ধতির পরিবর্তন সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন উত্থাপন করবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেভিন বার্গ বলেছেন, “আমরা মনে করি, বেশিরভাগ ব্ল্যাক হোল নক্ষত্রের ভয়ানক কোনো বিস্ফোরণ থেকে তৈরি হয়েছে। নতুন এই আবিষ্কার প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।” তার মতে, এই নতুন কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান শুধুমাত্র তাত্ত্বিক গবেষণার জন্যই নয় বরং এ থেকে নতুন প্রশ্ন এবং গঠনের সম্পর্কিত বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে অন্বেষণের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, কারণ কৃষ্ণগহ্বরের বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান আমাদের মহাবিশ্বের গঠন এবং এর ইতিহাসকে বুঝতে সাহায্য করে। কৃষ্ণগহ্বরগুলি সাধারণত তাদের ভর ও শক্তির কারণে আকর্ষণীয় হয়ে থাকে এবং তাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ও বিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বর্তমানে, বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে আরও গবেষণা চালানোর পরিকল্পনা করছেন। যাতে বোঝা যায়, আমাদের মহাবিশ্বে এ ধরনের ট্রিপল ব্ল্যাক হোল সিস্টেমগুলি আর কোথাও বিদ্যমান আছে কি না। নতুন এই আবিষ্কার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা কৃষ্ণগহ্বরের গঠন ও বিবর্তন নিয়ে আমাদের উপলব্ধিকে সম্পূর্ণ নতুন এক পথে নিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, এই আবিষ্কারের ফলে মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তনের বিষয়টি নতুন করে আলোচিত হচ্ছে এবং বিজ্ঞানীদের সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ উন্মোচিত করেছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মহাবিশ্বের রহস্য এখনও অনেক অজানা রয়ে গেছে। যা গবেষণার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হতে পারে।