বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে আগ্রহী সরকার।
তবে নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রেখেই। ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্টারলিংককে দেশে আনতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি একটি খসড়া গাইডলাইন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার)-কে তথ্য প্রদান করতে হবে এবং সরকারী আদেশ মেনে চলতে হবে।
পাশাপাশি যেকোনো সময় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করার ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকবে।
বিটিআরসির খসড়া গাইডলাইনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্থানীয় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের (আইআইজি) সঙ্গে সংযুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক।
এতে দেশের অভ্যন্তরে থাকা গ্রাহকদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ সহজ হবে এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের সুযোগ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। যা বর্তমানে প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করায়, দুর্গম অঞ্চলেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তাদের।
গত বছর স্টারলিংক বাংলাদেশে তাদের প্রযুক্তি পরীক্ষা করেছে এবং সে সময় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।
তবে এই খসড়া গাইডলাইনের বিভিন্ন শর্ত এবং নিয়ন্ত্রণমূলক বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম মনে করেন,
জাতীয় নিরাপত্তার নামে এভাবে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রদান সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং ইন্টারনেট সেবাদাতাদের স্বাধীনতা সংকুচিত করবে।
জুলাই-আগস্ট মাসে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের সময় যেভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, সেটি জাতীয়ভাবে প্রভাব ফেলেছিল। স্টারলিংক নিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন দেখা গেলেও, এই গাইডলাইনে এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা হয়নি।
নতুন গাইডলাইনের নির্দেশনা অনুযায়ী, স্টারলিংক বা অন্য যে কোনো স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতাকে বাংলাদেশের কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত হতে হবে।
পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান হলে সরকারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) নীতি মেনে চলতে হবে।
পাঁচ বছর মেয়াদী লাইসেন্স প্রদান করা হবে, যা নবায়নযোগ্য।
এছাড়া প্রতিটি সেবার আগে বিটিআরসি অনুমোদিত ট্যারিফ প্ল্যান মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকবে।
তবে খসড়া গাইডলাইনের বেশ কিছু শর্ত নিয়ে দেশীয় বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন,
“স্টারলিংক যদি আইআইজি গেটওয়ে ব্যবহারে বাধ্য হয়, তবে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। এটি মূলত আইএসপি সেবার মতোই হবে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়।”
নতুন গাইডলাইন নিয়ে সরকারী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।
একদিকে নিরাপত্তার কারণ দেখানো হলেও, অন্যদিকে এটি কতটা ব্যবহারকারীদের অধিকার সংরক্ষণ করবে এবং কতটা সরকারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।