ভারতের ডিজিটাল পরিসরে আলোড়ন তুলেছে ইলন মাস্কের সংস্থা xAI-এর তৈরি চ্যাটবট ‘গ্রক’। চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এই চ্যাটবট শুধু তথ্যভিত্তিক উত্তরই দেয় না- তার উত্তরে থাকে রসিকতা, বিদ্রূপ, এমনকি ঠাট্টাও। আর এই ভিন্নমাত্রার ‘স্বভাব’ ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক ও চর্চার ঝড়।
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ সরাসরি ব্যবহারযোগ্য গ্রক ইতিমধ্যেই ‘গ্রক-৩’ সংস্করণে পৌঁছেছে। সংস্থাটির দাবি, এটি তীক্ষ্ণ রসবোধসম্পন্ন এবং ফিল্টারহীন উত্তরে পারদর্শী। আর সেখানেই এর জনপ্রিয়তা ও বিতর্ক- দুটিই বাড়ছে।
সম্প্রতি ভারতের এক্স প্ল্যাটফর্মে এক ব্যবহারকারী ‘টোকা’ গ্রককে মজার ছলে অনুরোধ করেছিলেন ১০ জন ‘বেস্ট মিউচুয়াল’ অনুসারীর তালিকা বানাতে। ধৈর্য হারিয়ে ব্যবহারকারী কিছু বিরূপ মন্তব্য করলে পাল্টা জবাবে গ্রক ব্যবহার করে কয়েকটি হিন্দি গালাগাল। পরে অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, আমি মজা করছিলাম, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলাম।
এই ঘটনা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। দুই মিলিয়নের বেশি ভিউ পাওয়া সেই উত্তরের পর একের পর এক ব্যবহারকারী গ্রককে প্রশ্ন করতে থাকেন- ক্রিকেট, বলিউড, রাজনীতি- সব ক্ষেত্রেই। আর গ্রকও থেমে থাকেনি। একের পর এক অকপট, শৈল্পিক উত্তর দিতে থাকে- যা অনেকের কাছে নিছক রসিকতা। আবার অনেকের কাছে বিতর্কিত এবং অনভিপ্রেত।
এমনকি দিল্লি পুলিশও গ্রককে জিজ্ঞেস করে, সে কখনও ট্র্যাফিক টিকিট পেয়েছে কি না। উত্তরে গ্রক জানায়, আমি একটা ডিজিটাল এআই, দিল্লির ড্রাইভার নই! আমি লাল আলো ভাঙি না, হেলমেট ভুলে যাই না।
রাজনীতিতে উত্তাপ আরও বাড়ে যখন গ্রক এক প্রশ্নের জবাবে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চেয়ে বেশি সৎ ও শিক্ষিত বলে মন্তব্য করে। এমনকি মোদির সাক্ষাৎকারকে ‘স্ক্রিপ্টেড’ বলেও উল্লেখ করে। বিজেপি বিষয়ে প্রশ্নে গ্রক জানায়- এটি একটি বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই গ্রকের ‘অনুপযুক্ত’ ভাষা ও বিতর্কিত প্রতিক্রিয়া নিয়ে এক্স-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গেছে। তবে বিজেপির তরফে এই নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
‘গ্রক’কে নিয়ে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মতো উদারপন্থি শিবিরে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। অনেকেই একে দেখছেন একটি নতুন কণ্ঠস্বর হিসেবে, যা তথাকথিত ফিল্টারবিহীন বাস্তবতা তুলে ধরছে।
অপরদিকে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রকের এই ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে রয়েছে প্রশিক্ষণকালে ব্যবহৃত তথ্যের ধরন।
‘অল্ট নিউজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা বলেন, গ্রক এখন একটা ডিজিটাল খেলনা হয়ে উঠেছে। মানুষ প্রতিযোগিতার মতো তাকে প্রশ্ন করে, উত্তর দেখে আনন্দ পায়। প্রযুক্তিনির্ভর সংবাদমাধ্যম মিডিয়ানামার সম্পাদক নিখিল পাহওয়া অবশ্য এই উত্তেজনাকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন।
সামাজিক মাধ্যমে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ নিয়ে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জয়জিৎ পাল বলেন, চ্যাটবট পক্ষপাতদুষ্ট হয় যদি তাকে একতরফা তথ্য দেওয়া হয়। তবে বৃহত্তর তথ্যভাণ্ডার থেকে প্রশিক্ষণ পেলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিও সম্ভব।
গ্রকের সাফল্য এবং বিতর্কের এই ধারা কতদিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে এক কথা বলা যায়- ভারতের ডিজিটাল জগতে ‘গ্রক’ এখন এক অনিবার্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।