আজকের ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা এনেছে। আমরা এখন এক ক্লিকে তথ্য পেতে, শিক্ষালাভ করতে, বিনোদন উপভোগ করতে পারি। তবে এই সুবিধার সঙ্গে এসেছে নতুন ধরনের সমস্যা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং আশঙ্কাজনক হলো ডিপফেক ভিডিও। ডিপফেক হল একধরনের কৃত্রিমভাবে তৈরি ভিডিও, যেখানে কোনো ব্যক্তির মুখমণ্ডল, কণ্ঠস্বর বা শারীরিক অঙ্গভঙ্গি অন্য কারও ওপর বসিয়ে এমন দৃশ্য তৈরি করা হয় যা বাস্তবে ঘটেনি। সহজভাবে বললে, এটি একটি প্রযুক্তি যা মিথ্যা কিন্তু বাস্তবের মতো ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম।
ডিপফেক ভিডিওর অপব্যবহার এখন শুধু বিনোদন বা ইন্টারনেট ট্রলিংয়ে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষও এর শিকার হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি এই ভিডিও ব্যবহার করে ব্যাংকিং, কর্পোরেট ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সেক্টরে জালিয়াতির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বহুজাতিক কোম্পানির হংকং অফিসে ডিপফেক ভিডিও ব্যবহার করে সিইও-এর ছদ্মবেশ ধারণ করে ২৫.৬ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়া হয়।
এই প্রযুক্তি এতটাই সহজ হয়ে গেছে যে এখন মোবাইল অ্যাপ দিয়েও সাধারণ মানের ডিপফেক ভিডিও তৈরি করা সম্ভব। ফলে এর অপব্যবহারও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র আর্থিক খাতেই নয়, নির্বাচনকালীন সময়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিডিও বানানো, এবং ব্যক্তিগত ভিডিওর মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল ও সামাজিক লাঞ্ছনা ঘটানো হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, ভোটারদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হচ্ছে এবং সমাজে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।
ডিপফেক প্রযুক্তি যদিও সিনেমা, শিক্ষা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, তবে এর অপব্যবহার সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি তৈরি করছে। তাই ডিপফেক শনাক্তকরণ প্রযুক্তি আরও উন্নত করতে হবে এবং ব্যবহারকারীদের সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে, আইনগত পদক্ষেপও গ্রহণ করা জরুরি, যাতে কেউ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণা বা অন্যের ক্ষতি করতে না পারে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় সুবিধা যতই বাড়ুক, সতর্কতা ছাড়া প্রযুক্তি আমাদের জন্য বিপদও বয়ে আনতে পারে। ডিপফেক শুধু প্রযুক্তি নয়, এটি আমাদের সচেতনতা, নৈতিকতা ও আইনের পরীক্ষাও।