আজকের রাতটি যেন এক জাদুকরী অভিজ্ঞতার রাত হতে চলেছে। শরতের নিস্তব্ধ আকাশে আজ দেখা মিলবে উল্কাবৃষ্টির এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যের। রাত গভীর হতেই দক্ষিণ আকাশজুড়ে ছুটে চলবে আলোকরেখার ঝলক—মহাকাশের ধুলা, বরফ আর পাথুরে কণার আগুনঝরা নৃত্য।
‘ওরায়নিড’ নামের এই উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাত ১০টা থেকে বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, আজ রাতে আকাশ যদি মেঘমুক্ত থাকে, তাহলে দক্ষিণ দিগন্তের দিকে তাকালে আকাশ জুড়ে ছুটে চলা উল্কার ঝলক বেশ স্পষ্টভাবে দেখা যেতে পারে।
তবে এবারের উল্কাপাতে একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জও থাকবে—পূর্ণিমার চাঁদের আলো। আকাশে চাঁদ থাকায় উল্কাপাতের উজ্জ্বলতা কিছুটা ম্লান হয়ে যেতে পারে। তবুও শহরের কৃত্রিম আলো এড়িয়ে কোনো খোলা জায়গা থেকে তাকালে দৃশ্যটি উপভোগ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিক থেকে এই উল্কাপাতের উৎস অত্যন্ত পরিচিত—হ্যালির ধূমকেতু। ১৯৮৬ সালে যে ধূমকেতু পৃথিবীর আকাশে দেখা গিয়েছিল, সেটিই সূর্যের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে পথের ধারে বরফ, ধুলা আর ক্ষুদ্র পাথরের কণা ফেলে গিয়েছিল। পৃথিবী যখন সেই পথে প্রবেশ করে, তখন ওই কণাগুলো বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে জ্বলে ওঠে। বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে পুড়ে ছাই হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা তৈরি করে আলোকরেখা—যা আমরা দেখি উল্কাপাত বা ‘শুটিং স্টার’ হিসেবে।
বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছে সাধারণ দর্শকদের জন্যও। তাদের আয়োজনে ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে রাতভর থাকবে উল্কাবৃষ্টি দেখার আয়োজন।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে দর্শকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—
সঙ্গে রাখতে পারেন পাটি বা চাদর বসার জন্য, চা–কফি ও হালকা খাবার, আর যাদের ব্যক্তিগত টেলিস্কোপ আছে তারা সেটিও নিয়ে যেতে পারেন।
আয়োজকেরা বলছেন, “উল্কাবৃষ্টি শুধু এক বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়, এটি মহাবিশ্বের সৌন্দর্যের প্রকাশ। শিশু, তরুণ কিংবা বয়স্ক—সবাই যদি এমন দৃশ্যের সাক্ষী হয়, তাহলে মহাকাশ ও বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা আরও বাড়বে।”
আজকের রাত তাই কেবল একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়—এটি আকাশের ওপরে ছড়িয়ে থাকা আলোর এক বিস্ময়কর কবিতা, যা মনে করিয়ে দেবে, মহাবিশ্ব কতটা রহস্যময় আর অনন্ত সুন্দর।