আমাদের দৈনন্দিন জীবন যত দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে, ঠিক ততই বদলে যাচ্ছে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও। সেই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে এবার পাসপোর্টও উঠে এসেছে স্মার্টফোনের পর্দায়। চলতি সপ্তাহেই অ্যাপল ঘোষণা করেছে, তাদের ওয়ালেট অ্যাপে এখন পাসপোর্ট সংরক্ষণ করা যাবে, যা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ২৫০টি বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা যাবে না, তবে দেশের ভেতরে ফ্লাইট ধরতে আর পাসপোর্ট বের করে দেখাতে হবে না—ফোনের স্ক্রিনই যথেষ্ট। অবশ্যই যাত্রীদের আসল পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে হবে, কারণ প্রয়োজনে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তা চাইতে পারে।
গত বছর প্রথম গুগল অ্যান্ড্রয়েডে ডিজিটাল পাসপোর্ট সুবিধা চালু করে। এবার অ্যাপলও একই পথে হাঁটল। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজ্য ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্সও চালু করেছে, যা ওয়ালেট অ্যাপ বা নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।
ডিজিটাল পাসপোর্ট কীভাবে কাজ করে?
দুই কোম্পানির প্রক্রিয়া কিছুটা আলাদা হলেও মূল ধারণাটি একই—
ডিজিটাল ফরম্যাটে পাসপোর্ট যাচাই করে ফোনে সেভ করে রাখা।
অ্যাপলের ক্ষেত্রে:
-
ব্যবহারকারীকে প্রথমে পাসপোর্টের তথ্য ও নিরাপত্তা চিপ স্ক্যান করতে হয়।
-
তারপর সেলফি তুলতে হয়, যেখানে মাথা বিভিন্ন দিকে ঘোরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
-
যাচাই সম্পন্ন হলেই পাসপোর্ট অ্যাপে যুক্ত হয়ে যায়।
গুগলের ক্ষেত্রে:
-
পাসপোর্টের চিপ স্ক্যান করার পর একটি ছোট সেলফি ভিডিও নিতে হয়।
-
কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওয়ালেটে যুক্ত হয়ে যায় ডিজিটাল পাসপোর্ট।
অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, হাওয়াই, জর্জিয়া, মেরিল্যান্ডসহ ১২টি রাজ্য ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স অ্যাপল ও গুগল ওয়ালেটে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। কিছু রাজ্য আবার নিজেদের আলাদা অ্যাপ তৈরি করেছে। স্যামসাং ওয়ালেটেও অনেক রাজ্যে ডিজিটাল আইডি রাখা যায়।
মার্কিন পাসপোর্ট নিজেই ‘রিয়েল আইডি’। তাই এর ডিজিটাল সংস্করণও সেই সুবিধা বহন করে।
তবে ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সব রাজ্য নয়—কেবল যেসব রাজ্য ফেডারেল অনুমোদন নিয়েছে তারা এটি ‘রিয়েল আইডি’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
ভ্রমণকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো—ডিজিটাল আইডির ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে অবশ্যই একটি আসল পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা উচিত।
ডিজিটাল পাসপোর্টকে অনেকে উদ্ভাবনী সুবিধা হিসেবে দেখলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে ব্যক্তিগত তথ্য নতুনভাবে নজরদারির ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের প্রযুক্তি–গোপনীয়তা বিশ্লেষক জে স্ট্যানলি মনে করেন, ডিজিটাল পরিচয় ভবিষ্যতে মানুষের ওপর আরও বেশি নজরদারি সহজ করে দেবে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন—
আগে যে অনেক ওয়েবসাইটে শুধু জন্মতারিখ দিলেই চলত, ভবিষ্যতে সেখানে সরাসরি আইডি স্ক্যান চাওয়া হতে পারে।
এমনকি বাস বা ট্রেন যাত্রার মতো ক্ষেত্রেও যেখানে আগে পরিচয়পত্র লাগত না, ডিজিটাল আইডির কারণে তা বাধ্যতামূলক হয়ে উঠতে পারে।
সব মিলিয়ে তিনি মনে করেন, ডিজিটাল আইডি হয়তো এক সময় সবার জন্যই “ভার্চুয়াল অ্যাঙ্কেল মনিটর”-এর মতো হয়ে উঠতে পারে—যেখানে আপনার প্রতিটি চলাফেরার তথ্য আরও সহজে অনুসরণ করা যাবে।

