অক্টোবরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে এর কারণ বঙ্গোপসাগরের বায়ুমণ্ডলীয় পরিবর্তন। সামনের দিনগুলোতে এই প্রবণতা আরও তীব্র হতে পারে, কারণ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি নতুন লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও রদবদল হতে পারে।
আজ শনিবার সকাল ৯টায় প্রকাশিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে শনিবার দেশের আটটি বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও রবিবার এবং সোমবার আবহাওয়া কিছুটা শুষ্ক থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, তবে এই সময়েও তাপমাত্রা সামান্য বাড়ার আভাস রয়েছে। তাপমাত্রা বাড়লেও তা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য হবে না।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ব্যাপক তারতম্য দেখা গেছে। ফেনীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে ডিমলাতে। আর বৃষ্টিপাতের হিসাবে যশোরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবহাওয়ার পরিবর্তন বেশ প্রকট এবং তাপমাত্রার তারতম্য অনেক বেশি। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী দিনগুলোতেও এই বৈচিত্র্য বজায় থাকবে।
অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে গত বুধবার থেকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ নিম্নচাপে রূপ নেয়, যা ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। যদিও এটি মূলত ভারতের দিকে আঘাত হানে এবং এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয় যা এখনো চলছে।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, বঙ্গোপসাগরে আগামী কয়েকদিনে আরও লঘুচাপ ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে, যা উপকূলীয় এলাকা থেকে শুরু করে দেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়াবে। এমনকি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশে এই বৃষ্টিপাতের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব দুটোই হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমন ধানসহ অন্যান্য শস্যের জন্য বৃষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ খরার পর এ বৃষ্টি জমিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনবে যা কৃষির জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে, যা ফসলের ক্ষতি করার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।
বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় জনজীবন ব্যাহত হতে পারে। শহরাঞ্চলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে জলাবদ্ধতার সমস্যা হতে পারে, যা যানজট ও বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে এবং জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের সতর্ক করা হয়েছে, যাতে তারা জরুরি প্রস্তুতি নিতে পারেন।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে সমুদ্র বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ এবং এর সম্ভাব্য নিম্নচাপে রূপান্তরিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের সামুদ্রিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, যারা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য যান তাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তীরে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, বৃষ্টিপাতের এই ধারা আগামী সপ্তাহেও অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে দেশের জনসাধারণকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়মিত অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানুষদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।
সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে কৃষকরা এই বৃষ্টিপাতের কারণে স্বস্তি পেলেও বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বন্যা ও জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের এই অবস্থা যে আরও কিছুদিন চলতে পারে, তা আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনসাধারণের সতর্কতা অবলম্বন জরুরি হয়ে পড়বে।