জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সরব হয়েছে। দেশজুড়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গতকাল অনুষ্ঠিত এ সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের পক্ষ থেকে দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশের জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামানের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট একটি রোডম্যাপ প্রয়োজন। এতে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং বিভিন্ন দল প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ পাবে। এ ছাড়া দেশের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নেও সরকারের জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানান তারা।
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদিকী এবং এনডিপির চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের।
এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলও সংলাপে অংশ নেয়। আলোচনার পর আন্দালিব রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। “নিষিদ্ধ করা হবে কি না, সেটা মুখ্য নয়, তবে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে” বলেন তিনি।
আন্দালিব রহমানের মতে, আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্ররা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় হুমকি তৈরি করছে এবং তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি দাবি করেন, এই দলগুলো দেশের জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করেছে এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম সংলাপের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা হবে। “তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে,” বলেন মাহফুজ আলম। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্রদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হবে এবং এই বাধা বাস্তবায়নের আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা শিগগিরই দেখা যাবে।
আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সরকার পর্যালোচনা করছে বলেও জানান তিনি। তবে, এই সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়া হবে না বরং সকল রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের প্রতিনিধিদলও সংলাপে অংশ নেয় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। দলটির পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। গণফোরামের নেতারা নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন, যা সরকার ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে বলে জানান দলের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু।
১২-দলীয় জোটের নেতারাও সংলাপে অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি তাদের ১৪ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রশাসনিক প্রেতাত্মাদের অপসারণ এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছি।”
এভাবে, সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসনিক ও নির্বাচনী সংস্কারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছে। সংলাপে দলগুলোর বিভিন্ন প্রস্তাব কতটা গুরুত্ব পাবে এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কতদূর কার্যকর হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।