রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাজধানীর বঙ্গভবনের সামনের সড়কে কয়েক শ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। বিকেল গড়িয়ে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। রাত সাড়ে আটটার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ বঙ্গভবনের প্রধান প্রবেশপথের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একপর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। সেনাবাহিনীও পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সংগঠন, বিশেষ করে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই ‘২৪, ৩৬ জুলাই পরিষদ, জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদ এবং ছাত্র-জনতার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করে। তাদের অভিযোগ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং এখন তিনি আর রাষ্ট্রপতির পদে থাকার নৈতিক অধিকার রাখেন না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি দল হঠাৎ করে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। তখন সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকে বিক্ষোভকারীদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয় কিন্তু তারা সরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা ওই এলাকায় অবস্থান করছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা ‘এক দফা, এক দাবি—রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ’ স্লোগান দিতে থাকেন। প্রথম আলো থেকে জানা যায় সেখানে থাকা আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন যা তার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রমাণ। ‘রক্তিম জুলাই-২৪’ ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের একজন, সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ বলেন, “শেখ হাসিনার পদত্যাগের আড়াই মাস পরও রাষ্ট্রপতি এমন মন্তব্য করে তার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। আমরা তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না।”
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আরিফুল ইসলাম নামের একজন ছাত্র-জনতার ঐক্যমঞ্চের নেতা বলেন, “রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
এর আগে বিকেলে, ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা শাহবাগে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সন্ধ্যার দিকে তারা বঙ্গভবনের সামনে এসে জড়ো হয়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা বুধবার তাদের সঙ্গে বৈঠক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই আশ্বাসে তারা আপাতত বিক্ষোভ স্থগিত করেছেন, তবে বৈঠকের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বঙ্গভবনের সামনের সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, যা বিক্ষোভ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।