চলনবিলের আটটি জেলায় আমন কাটার পর একই জমিতে বিনাহালে কাদার ওপর চলছে রসুন রোপণ। লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে আঞ্চলিক কৃষি অফিস ৩৯ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের। এবার রসুন চাষে কৃষকের সার্বিক ব্যয় বেড়েছে অন্য বছরের তুলনায়।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও বগুড়ার অতিরিক্ত পরিচালক সরকার শফিউদ্দিন বলেন, ‘চলনবিল অঞ্চলে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে বিনাহালে রসুন আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কাদার ওপর রসুন রোপণের পর একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে তরমুজ বাঙ্গি চাষ এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাচ্ছে। বিশেষ করে গত মওসুমে ভালো দাম পাওয়ায় এবছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও এবছরও রসুনে ভালো ফলন পাবেন কৃষক।’
এ অঞ্চলের কৃষকরা জানিয়েছেন, সেচ, সার-কীট নাশক, বীজ, শ্রমিকসহ সার্বিক ব্যয় বাড়লেও গত বছর ভালো দাম পাওয়া এবং সাথী ফসল তরমুজ-বাঙ্গিতে লাভবান হওয়ায় রসুন চাষে এই অঞ্চলের কৃষকের আগ্রহ আরও বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর জমি লীজ বাবদ প্রতি বিঘায় ১০হাজার, সার-কীটনাশক বাবদ ৫ হাজার, বীজ বাবদ ৩০ হাজার, শ্রমিক বাবদ ৮ হাজারসহ শুধু রসুন রোপণেই মোট ৫৩ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত বছর এই খরচ ৪২ থেকে ৪৫ হাজারের মধ্যে ছিল।
চলনবিলের কয়েকজন কৃষক বলেন, বেশিরভাগ কৃষক ঋণের টাকায় রসুন রোপণ করেন। অথচ প্রায় প্রতিবছরই রসুনের দাম উঠানামা করে। তারপরও গত বছরের হিসেব মতে, প্রতি বিঘায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গড়ে ২০ থেকে ২২ মণহারে রসুনের ফলন পাওয়া গেছে। বাজার দর ভালো থাকায় আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন তারা। চলতি মওসুমে খরচ একটু বাড়লেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রসুনের বাম্পার ফলনের আশা তাদের। একই সঙ্গে একই খরচে রসুনের জমিতে সাথী ফসল তরমুজ-বাঙ্গিতেও লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিস বলছে, ‘ইতোমধ্যে নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, হান্ডিয়াল, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ এলাকায় রসুন রোপণ শুরু হয়েছে। রসুন রোপণের পাশাপাশি রসুন ভাঙ্গার কাজে এই অঞ্চলের মানুষ ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।’
রাজশাহী ও বগুড়া আঞ্চলিক কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মওসুমে রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় ২৮ হাজার ১৮৫ ও বগুড়া অঞ্চলের চার জেলায় ১১ হাজার ৪১৯ হেক্টর জমিতে রসুন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহীতে ৫ হাজার ৫২০, নওগাঁয় ৭৬৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩ হাজার ৭০০, নাটোরে ১৮ হাজার ২০০, বগুড়ায় ৬০০, জয়পুরহাটে ২৮৭, পাবনায় ৯ হাজার ৬৩২, সিরাজগঞ্জে ৯০০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করা হচ্ছে।
পরিসংখান মতে. রাজশাহী ও বগুড়া অঞ্চলে ২০২১ মওসুমে ৫১ হাজার ৪৩৩ হেক্টর, ২২ মওসুমে ৪৪ হাজার ৪৬৯, হেক্টর, ২৩ মওসুমে ৩৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে বিনাহালে রসুন আবাদ করা হয়েছে। এই ৩ মওসুমে রসুনের উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৭০৭ মেট্রিকটন।