সৌদি আরবে বায়োগ্যাস বিষক্রিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন কুমিরমারা এলাকার রাসেল মিয়া (৩২)। সোমবার ১৮ নভেম্বর, রিয়াদের ইশারা খালেদিয়া শহরের একটি ছাপাখানা ফ্যাক্টরিতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত রাসেল ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের মোস্তু মিয়ার তৃতীয় সন্তান।
জীবিকার তাগিদে প্রবাসী জীবন শুরু-
সাত বছর আগে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য সৌদি আরবে পাড়ি জমান রাসেল। সেখানে শ্রমিকের কাজ করলেও দুই বছর আগে দেশে না এসে মুঠোফোনে বিয়ে করেন একই এলাকার বাসিন্দা আনিকা বেগমকে। তাদের সংসারে পাঁচ মাস আগে জন্ম নেয় একটি কন্যাসন্তান, তাবাচ্ছুম। তবে সন্তান জন্মের আগেই স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রেখে রাসেল আবারও সৌদি আরব ফিরে যান।
নিহতের পরিবার জানায়, সোমবার বিকেলে পরিবারের সঙ্গে ফোনে শেষবার কথা বলেন রাসেল। এর কিছুক্ষণ পরই রাসেলের মৃত্যু সংবাদ আসে। ঘটনাস্থলে থাকা সৌদি প্রবাসী ফায়েজ উদ্দিন জানান, রাসেলের ফ্যাক্টরির ভবনের চতুর্থ তলায় বাথরুম পরিষ্কারে ব্যবহার করা হয় কোল্ডডেক্স নামের একটি রাসায়নিক। রাসেল দ্বিতীয় তলায় বাথরুমে ঢোকার পর কেমিক্যাল থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত গ্যাস বাথরুমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে রাসেল অজ্ঞান হয়ে যান।
রাসেলকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তার ফ্যাক্টরির ম্যানেজারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন। দুজনকেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
রাসেলের বাবা মোস্তু মিয়া বলেন, “সন্ধ্যায় ছেলের সঙ্গে শেষ কথা বলি। কে জানত, এটি আমাদের শেষ কথোপকথন হবে।” তিনি সরকারের কাছে ছেলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সাহায্য কামনা করেন।
রাসেলের মৃত্যুর খবরে পুরো কুমিরমারা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, “রাসেল খুবই সংগঠিত ও ভালো মানুষ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টকর। গ্রাম থেকে বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অনেকেই পরিবারকে আর্থিক সচ্ছলতা দিতে চায়। কিন্তু এমন দুর্ঘটনায় পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ে। তার ছোট শিশুটি এখন পিতৃহারা হলো। আল্লাহ যেন এই পরিবারের শোক সইবার তৌফিক দেন।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কর্মস্থলে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে প্রবাসীদের আরও সতর্ক হতে হবে এবং সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাসেলের মর্মান্তিক মৃত্যুর এই ঘটনা শুধু তার পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক শিক্ষণীয় বার্তা।
সরকারি সহায়তায় রাসেলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা এবং তার পরিবারের প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ অত্যন্ত জরুরি।