জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা করিম (ডাকনাম রাচি) একটি ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারানোর ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ দুর্ঘটনার প্রতিবাদে এবং ন্যায্য বিচারের দাবিতে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শোকমিছিল বের করেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে নতুন কলাভবন এবং পুরোনো প্রশাসনিক ভবন হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা আফসানার মৃত্যুর ঘটনায় ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
১১ দফা দাবির মূল বিষয়গুলো:-
১. আফসানার মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. আফসানাকে মরণোত্তর ডিগ্রি প্রদান।
৩. কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একটি অংশ আফসানার নামে নামকরণ।
৪. শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া-মাহফিল আয়োজন।
৫. ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সড়কবাতি, ফুটপাত এবং যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া।
৬. নিবন্ধনহীন যানবাহন নিষিদ্ধ এবং রিকশাচালকদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা।
৭. আফসানার পরিবারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান।
৮. চিকিৎসাকেন্দ্রে জরুরি সেবার মানোন্নয়ন।
৯. অদক্ষ নিরাপত্তাকর্মীদের প্রত্যাহার এবং সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল করা।
১০. ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা।
১১. যানবাহনের গতিরোধক স্থাপন ও গতি পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন।
উপাচার্যের আশ্বাস ও শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া-
মিছিল শেষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এবং প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য। পাশাপাশি তিনি জানান, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে কাজ করছে এবং কিছু কার্যক্রম ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াধীন।
ইংরেজি বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতি বলেন, “উপাচার্য আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে।”
প্রক্টরিয়াল বিবৃতি-
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “আফসানার মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসন গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং একটি প্রশাসনিক সভায় শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীর নামে রাস্তার নামকরণ এবং তাঁর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
এদিকে, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রত্যাশা বেড়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
আফসানার মৃত্যু শুধু একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা নয় বরং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনার একটি করুণ উদাহরণ। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি প্রশাসনের দ্রুত মেনে নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে, ক্যাম্পাসে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আফসানার পরিবার এবং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানানো প্রয়োজন। প্রশাসনের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।