বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বেতন গ্রেড উন্নীত করার জন্য বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছেন। বর্তমানে, সরকার তাদের বেতন ১২তম গ্রেডে নির্ধারণ করেছে, কিন্তু শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, অন্তত ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়া হোক। এটি মূলত তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, যা সরকার এখনও পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, চাকরির ১০ এবং ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়া এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এই তিনটি দাবিতে তারা ১৫ মে পর্যন্ত এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবে। এরপর ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত তারা দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবে এবং ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবে। দাবি পূর্ণ না হলে ২৬ মে থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবে। এই কর্মবিরতির মধ্যে স্কুলের কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে, যা শিক্ষার পরিবেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে নির্ধারিত হলেও সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডে রয়েছে। ২০১৩ সালের পর থেকে সহকারী শিক্ষকরা তাদের বেতন কাঠামো পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তবে ২০২০ সালে সরকারের পক্ষ থেকে বেতন কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন করা হলেও এখনও তাঁদের দাবির মূল বিষয়টি মেটানো হয়নি।
২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছিল, যা এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এরপর ১৩ মার্চ উচ্চ আদালত প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার নির্দেশ দেন এবং সেই অনুসারে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত করা হলেও সহকারী শিক্ষকদের জন্য এখনো ১২তম গ্রেড বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুদ রানা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদের নেতৃত্বে গঠিত পরামর্শক কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্ত করে শুরুতেই “শিক্ষক” পদে ১২তম গ্রেডে নিয়োগ এবং ২ বছর পর স্থায়ীকরণ এবং পরবর্তী দুই বছর পর “সিনিয়র শিক্ষক” হিসেবে ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি দেয়া হবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এই সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে অনেক বাধা রয়েছে।
শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী, তারা শুধু বেতন কাঠামো পরিবর্তন চাইছেন না, পাশাপাশি ১০ এবং ১৬ বছর চাকরির পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন। শিক্ষক নেতারা জানাচ্ছেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি পুরণ না হলে এই আন্দোলন আরো তীব্র হবে, এবং তা পুরো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বলেন, “আমরা ৪ বছরের মধ্যে আমাদের বেতন ১২তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করতে চাই, এবং চাকরির সময় অনুযায়ী পদোন্নতির জন্যও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা চাই।”
এ বিষয়ে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল-আমীন বলেন, “এই মুহূর্তে ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়া খুবই জরুরি, পরে আলাদা বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে।”
এদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেড দেওয়া এখনো সম্ভব নয় কিন্তু ১২তম গ্রেডে নিয়োগ ও ৪ বছর পর ১১তম গ্রেডে পদোন্নতির বিষয়টি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
এভাবে, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকরা তাঁদের যৌক্তিক দাবির প্রতি স্থির থাকতে চাচ্ছেন এবং তা পূরণের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একতাবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে, তাদের দাবির প্রতি সরকারের যথাযথ মনোযোগ ও সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হলে এটি দেশের শিক্ষা খাতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।