কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় দুধকুমার নদীর তীরে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সোনাহাট রেলসেতু দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। এই লোহার সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রায়শই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
রোববার (২৯ জুন) সকালে সেতুর একটি পাটাতন ভেঙে যাওয়ায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়ে, ফলে প্রায় ২৫ ঘণ্টা সেতুতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। সোমবার সকাল ৯টার দিকে পাটাতনটি সংস্কারের পর যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়।
সোনাহাট স্থলবন্দরের সঙ্গে দেশের একমাত্র সড়ক সংযোগ হওয়ায় এই সেতুর কোনো বিকল্প পথ নেই।
প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ২০০-২৫০টি ট্রাকসহ এক হাজারেরও বেশি ভারী ও হালকা যানবাহন চলাচল করে। গত ছয় মাসে সেতুর পাটাতন ভেঙে ট্রাক আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ১৭ বার। প্রতিবারই যান চলাচল ৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বন্ধ থেকেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুলতান আহমেদ জানান, সেতুটি দিয়ে একই সময়ে দুই দিক থেকে যানবাহন চলাচল সম্ভব নয়। এক দিকে যান চললে অন্য দিকের যানবাহন ও পথচারীদের ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। একটি ট্রাক আটকে গেলে পুরো এলাকার যোগাযোগ কয়েক ঘণ্টার জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট, বলদিয়া, চর ভূরুঙ্গামারী, আন্ধারীঝাড় ও তিলাই ইউনিয়ন এবং নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা এই সেতু ব্যবহার করে উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। সেতুতে যানবাহন আটকে গেলে রোগী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী ব্যক্তিরা তীব্র দুর্ভোগের শিকার হন।
মেয়াদোত্তীর্ণ সোনাহাট সেতু-
সোনাহাট এলাকার ৩৬৬ মিটার দীর্ঘ এই রেলসেতুটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তবে পরে মেরামত করে ব্যবহারযোগ্য করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে এর নির্ধারিত আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যায়। তবুও এটি দিয়ে বছরের পর বছর যান চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
২০১২ সালে সোনাহাট স্থলবন্দর চালু হওয়ার পর থেকে যানবাহনের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, যা সেতুর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে এবং নিয়মিত ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘১৯৪৭ সালের পূর্বে ব্রিটিশরা সোনাহাটে এই রেলসেতু নির্মাণ করেছিল, যেখানে ট্রেন চলত। ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার পর এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। স্থানীয়দের জন্য এটি ফুটওভার ব্রিজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ডেক স্থাপন করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে। তবে ২০০১ সালে এর আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে।’
সোনাহাট স্থলবন্দর সি অ্যান্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আকমল হোসেন জানান, ‘অনেক চালক এই বিপজ্জনক সেতু পার হতে অনীহা প্রকাশ করেন। এতে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনে আমরা সমস্যায় পড়ছি। নতুন সেতুর নির্মাণকাজে দেরি হওয়ায় ব্যবসা ও সামগ্রিক অর্থনীতি বিরূপভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।’
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, দুধকুমার নদীর ওপর ৬৪৫ মিটার দীর্ঘ একটি কংক্রিট সেতু নির্মাণের কাজ চলছে, যার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪১ কোটি টাকা। আমরা আশা করছি, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এই নির্মাণকাজ শেষ হবে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে লোহার সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত পাটাতনগুলো আমরা নিয়মিত সংস্কার করে চলাচল সচল রাখছি।