ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে ইরানে আটকে পড়া ২৮ জন বাংলাদেশি অবশেষে সুস্থভাবে দেশে ফিরেছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তাঁরা। দীর্ঘ অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের দিন শেষে স্বজনদের সঙ্গে মিলনের মুহূর্তে কান্না আর আবেগে ভেসে যায় পুরো পরিবেশ।
ফেরত আসা বাংলাদেশিরা পাকিস্তান ও দুবাই হয়ে ঢাকায় পৌঁছান। যুদ্ধের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখনো চোখে ভাসে তাঁদের। গোলাগুলির শব্দ, আতঙ্কে ভরা রাত, সীমিত খাবার, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা—সব মিলিয়ে যেন মৃত্যু আর জীবনের মাঝখানে হেঁটে আসা এক অভিজ্ঞতা।
ফেরত আসা যাত্রীদের একজন, গুলশানের বাসিন্দা সালেক আহমেদ। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসা ও ঘুরতে গিয়েছিলেন ইরানের রাজধানী তেহরানে। ৬ জুন যান, ১৩ জুন ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ঠিক সেই সময়ই শুরু হয় ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা। পরিবারসহ আটকা পড়েন তেহরানে। পরে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের তৎপরতায় পাকিস্তান ও দুবাই হয়ে দেশে ফিরতে সক্ষম হন।
সালেক আহমেদের মতো আরও ২৭ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন যারা নানা প্রয়োজনে ইরানে অবস্থান করছিলেন—কেউ চিকিৎসা, কেউ ব্যবসায়িক কাজে, কেউবা শিক্ষার্থী হিসেবে।
তাঁরা সবাই বলেছেন, যুদ্ধের সময় তেহরানে থাকা ছিল নিছক এক জীবন্ত দুঃস্বপ্ন। “বিমান হামলার শব্দে শিশুরা ভয় পেত, আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ত, আমরা জানতাম না—পরের মুহূর্তটা আমাদের থাকবে কি না,” বলছিলেন এক প্রত্যাবর্তনকারী।
পরিবারের সদস্যদের ফিরে পেয়ে স্বজনদের চোখে জল, মুখে হাসি। তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনায় একযোগে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। শুরু হয় সরাসরি সংঘাত। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় দুই দেশ।
যুদ্ধ থেমে গেলেও সেই আতঙ্ক, সেই স্নায়ুচাপ আজো ফিরে আসা মানুষগুলোর চোখেমুখে স্পষ্ট।
তাঁরা এখন শুধু প্রার্থনা করছেন—আর যেন কখনো এমন যুদ্ধে আটকে না পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।