ঢাকার দোহার উপজেলায় বিএনপি নেতা ও শিক্ষক হারুনুর রশিদকে (৬৫) প্রকাশ্যে গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকারীরা তাঁকে গুলি করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর শরীরে একাধিকবার কোপ মারে। বুধবার (২ জুলাই) ভোরে উপজেলার বাহ্রা এলাকায় এ নৃশংস ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, সকালে নামাজ শেষে হাঁটতে বের হন হারুনুর রশিদ, যিনি বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক এবং নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন। পদ্মা নদীতীরবর্তী বাঁধঘেঁষা সড়কে হাঁটার সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে পাঁচ যুবক এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হত্যাকারীরা তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অন্তত তিনবার আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান, তবে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হাসপাতালে জড়ো হন। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ করেন এবং হত্যার বিচার ও খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
হারুনুর রশিদের স্ত্রী, শিক্ষক নাহিদা পারভীন অভিযোগ করেন, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই তাঁর মৃত্যুর কারণ।” নিহতের ছোট ভাই আবদুল মান্নান বলেন, “নয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের পরবর্তী নির্বাচনে হারুনুর চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি স্থানীয় বালু-মাটি ব্যবসায়ীদের বেআইনি কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদ করায় একটি মহল পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেছে।”
হারুনুরের ভাতিজা শাহিন বলেন, “কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।” তবে বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বিএনপির স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকতে পারে।”
দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলী বলেন, “হারুনুরের শরীরে চারটি গুলির ক্ষত এবং তিনটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সম্ভবত গুলি করেই মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”
তিনি আরো জানান, “অপরাধীদের শনাক্তে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যৌথভাবে কাজ করছে। লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক এই ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এ হত্যাকাণ্ড শুধু দোহার নয় বরং সমগ্র দেশজুড়ে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার ইঙ্গিত দেয়। দ্রুত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
নয়াবাড়ী ইউনিয়নে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও স্থানীয় প্রভাব বিস্তারের লড়াই এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পটভূমি হতে পারে বলে স্থানীয় মহলে গুঞ্জন রয়েছে। আবার ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে জনপ্রিয় নেতা হারুনুর রশিদকে ঠেকাতে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের অংশগ্রহণের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না এলাকাবাসী।
ঘটনাটি ঢাকার আশপাশের রাজনীতিক প্রেক্ষাপট ও স্থানীয় বাণিজ্যিক স্বার্থের সংঘাতের সঙ্গে সংযুক্ত কিনা- তা নিয়েও তদন্ত চলছে।