বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব নীতির নতুন উদ্যোগের আওতায় সম্প্রতি গুলশান ইউনিমার্টে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে ক্রেতাদের জন্য পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা বর্তমান বাজারের নতুন একটি চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের শুধুমাত্র নিজস্ব ব্যাগ আনতে দেওয়া হচ্ছে, তবে সেই ব্যাগটি অবশ্যই পরিবেশবান্ধব উপকরণ থেকে তৈরি হতে হবে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ সুপারমার্কেট চেইন ‘স্বপ্ন’র দারুসসালাম আউটলেটেও একই নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে সেখানকার বিক্রয় কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও সম্প্রতি এক গ্রাহক পাটের ব্যাগের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে অসম্মতি জানান। ৯ হাজার টাকার মুদি জিনিসপত্র কিনে তিনি যখন একটি ১৪ টাকার পাটের ব্যাগ নিতে অস্বীকার করেন, তখন তিনি জানান, এটি ‘নো প্লাস্টিক’ নীতির আড়ালে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের একটি অন্যায় কৌশল।
এই ঘটনায় অন্যান্য ক্রেতাদেরও মনোযোগ আকর্ষিত হয় এবং ১৫ মিনিটের মধ্যে আউটলেটের ম্যানেজার ও স্টাফরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে ক্রেতা এতটাই বিরক্ত হন যে, তিনি তার পুরো অর্ডারটি বাতিল করে দেন।
সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সকল সুপারস্টোরে পলিথিন ও পলিপ্রোপিলিন জাতীয় শপিং ব্যাগ ব্যবহারের উপর ১ অক্টোবর থেকে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ নির্দেশনা অনুসারে বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে এই নীতি কার্যকর হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। বাংলাদেশে ২০০২ সালে প্রথম প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। দুর্বল বাস্তবায়ন ও অপর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের কারণে আইনটি কার্যকর করার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
স্বপ্ন’র সিইও সাব্বির নাসির জানিয়েছেন, এটি শপিং সিস্টেমের ভবিষ্যৎ এবং গ্রাহকরা ধীরে ধীরে নতুন এই সিস্টেমের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠবে। বর্তমানে স্বপ্নে কাগজের ব্যাগ ও পাটের ব্যাগের দাম যথাক্রমে ৬ টাকা ও ১৪ টাকা। গ্রাহকরা চাইলে তাদের নিজস্ব ব্যাগ আনতে পারেন।
তবে, মিনাবাজার মিরপুর ১ আউটলেটের ক্যাশিয়ার জেসমিন আরা জানিয়েছেন, নতুন পরিবেশবান্ধব নীতিটি সম্পর্কে অনেক ক্রেতা অবগত নয়। চেকআউটের সময় তাদের এ বিষয়ে আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। যদিও তিনি আশাবাদী যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারা এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন।
এদিকে, কিছু গ্রাহক পাটের ব্যাগ কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাদের জন্য ক্যাশিয়াররা বিনামূল্যে কার্টুন বা নেট ব্যাগ প্রদান করছেন। তবে, ফ্রিজিং আইটেমের জন্য বাদামি কাগজের ব্যাগ ব্যবহারের ফলে বেশ কিছু গ্রাহক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্বপ্ন’র ক্রেতা বিনা আক্তার জানিয়েছেন, গরম পরিবেশে কাগজের ব্যাগে হিমায়িত পণ্যগুলি যথাযথভাবে নিরাপদে রাখা সম্ভব নয়।
মিরপুর টোলারবাগের ব্যাংকার আমিন উল্লাহ মনে করেন, সুপারস্টোরের দামের সঙ্গে ব্যাগের মূল্য যোগ হলে তা অতিরিক্ত মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তিনি তার মেয়ের জন্য জুস কিনতে এসে পাটের ব্যাগ কেনার পরিবর্তে হাতে করে নিয়ে যান।
এছাড়া, প্রিন্স বাজারে এখনও কিছু পলিপ্রোপিলিন ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। সেলসপারসন তাহসিন তাবাসসুম তৃষা জানান, তাদের কাছে পলিপ্রোপিলিন ব্যাগের একটি বড় স্টক রয়েছে, যা তারা তখনই বিতরণ করছেন যখন ক্রেতারা পাটের ব্যাগ কিনতে অস্বীকৃতি জানান।
মিরপুরের ছোট সুপারশপগুলো নতুন নীতির ব্যাপারে উদাসীন। তাদের কিছু বিক্রয়কর্মীও নীতির ব্যাপারে জানেন না। তবে গুলশান ইউনিমার্ট এবং অন্যান্য সুপারস্টোরগুলো নতুন নিয়মের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গুলশান ইউনিমার্টে পাটের ব্যাগের দাম অন্যান্য সুপারস্টোরের তুলনায় বেশি, যেখানে সস্তা পাটের ব্যাগের দাম ২৯ টাকা, মাঝারি ১৪৫ টাকা এবং সবচেয়ে বড় ব্যাগের দাম ৪৩০ টাকা। এই দামের পার্থক্যটি ক্রেতাদের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কিন্তু স্টোরটি পরিবেশবান্ধব নীতিটি কার্যকর করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ঢাকাজুড়ে ক্রেতাদের মধ্যে নতুন এই সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে লড়াই করার পাশাপাশি কিছু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। গুলশান অঞ্চলের ব্যবসায়ী ইনতেকাব ইসলাম বলেছেন, বিদেশে কেনাকাটার সময় নিজেকে ব্যাগ নিয়ে আসার নীতির প্রশংসা করেন। তিনি আশা করেন, দেশে এই পরিবর্তনও সাফল্যের সাথে বাস্তবায়িত হবে।
নতুন পরিবেশবান্ধব ব্যাগের নীতির প্রবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশে সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকরা ধীরে ধীরে এই নতুন সিস্টেমে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে।