খেলাপি ঋণ কমাতে নতুন নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে পুরোনো এবং আদায়ের সম্ভাবনা কম এমন ঋণ অবলোপন করতে পারবে ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে এসব ঋণ আদায়ে সফল কর্মকর্তারা পাবেন নগদ প্রণোদনা।
গতকাল (রোববার) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী ঋণ ব্যালান্সশিটে দেখানোয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন অপ্রয়োজনে ফুলে-ফেঁপে বড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকৃত আর্থিক অবস্থার সঠিক চিত্র ফুটে উঠছে না। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিতে পুরোনো ও ক্ষতিগ্রস্ত ঋণ অবলোপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন হবে আরও বাস্তবসম্মত।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ঋণ অবলোপনের অন্তত ৩০ কর্মদিবস আগে ঋণগ্রহীতাকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। অবলোপনের পরও যদি কোনো কর্মকর্তা ঋণ আদায়ে ভূমিকা রাখেন, তবে ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী তাকে নগদ প্রণোদনা দেওয়া যাবে। যেসব ব্যাংকের এখনো প্রণোদনা নীতিমালা নেই, তাদের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে নীতিমালা তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণ এবং ঋণ আদায় কার্যক্রম আরও সক্রিয় করতে এই প্রণোদনা নীতি কার্যকর করা হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ এর চেয়েও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ও কঠোর নীতিমালা প্রয়োগের ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসছে। এতদিন যেসব ঋণ কাগজে ‘ভালো’ হিসেবে দেখানো হতো, এখন সেগুলো মন্দ ঋণ হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাব ও বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে বিতরণ করা বিতর্কিত ঋণগুলোও এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্বলতা কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।