বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদমর্যাদা হবে একজন পূর্ণ মন্ত্রীর সমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সরকারের প্রতিনিধির সংখ্যা কমবে। পাশাপাশি গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের নিয়োগ হবে অনুসন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটি) সুপারিশের ভিত্তিতে—এমনই প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই এই খসড়া তৈরি করা হয়েছে। গভর্নর আলাদা চিঠি পাঠিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেককে। সেখানে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করে এই নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপে তাঁদের সহযোগিতা চান গভর্নর।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, অতীতে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার এ ধরনের সংশোধনের চেষ্টা করেছে কিন্তু রাজনৈতিক বাধা ও প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাবে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তাঁর মতে, বর্তমান সময়ই এ পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এটি করা গেলে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে। গভর্নর আরও বলেন, আইনটি সংশোধন করা গেলে আর্থিক খাতে অতীতের অনিয়ম ও ভুল পুনরাবৃত্তি রোধে দৃঢ় আইনগত ভিত্তি তৈরি হবে। সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে আরও ক্ষমতাবান করতে হবে। পাশাপাশি তাঁর ও দপ্তরের জবাবদিহিও স্পষ্ট করা জরুরি।”
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ করে। এখন গভর্নরকে নিয়োগ দেন সরকার। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী গভর্নরের অবস্থান সচিবদের ওপরে, তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নিচে। অ্যাটর্নি জেনারেল, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) সঙ্গে গভর্নরের মর্যাদা সমান।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকার থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। মূল কাজ হলো মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। তবে অনেক সময় কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বাংলাদেশেও অতীতে গভর্নর পদে থাকা ব্যক্তিদের সরকারের অনুগত হিসেবে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটা খুব সংবেদনশীল বিষয়। কাজটি সহজ নয়। আমরা খসড়াটি পর্যালোচনা করব এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করব। তার আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করা হয়। সেখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গভর্নরকে মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাবে প্রশাসনের কিছু মহল আপত্তি তুলতে পারেন। চিঠিতে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা পূর্ণ মন্ত্রীর সমমর্যাদা ভোগ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মন্ত্রীর সমমর্যাদা দাবির পেছনে কারণ:
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, গভর্নরের পদমর্যাদা যদি পূর্ণ মন্ত্রীর সমান হয়, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। এতে শুধু মর্যাদাই নয়, নীতিগত স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিত্ব ও আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায়ও এটি হবে একটি মৌলিক কাঠামোগত পদক্ষেপ।
অর্থ উপদেষ্টা ও সচিবদের পাঠানো চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করেন। এতে তাঁদের নীতিগত স্বাধীনতা বজায় থাকে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্তৃত্ব নিশ্চিত হয়।
আহসান মনসুর বলেন, গভর্নর যদি পূর্ণ মন্ত্রীর সমমর্যাদাসম্পন্ন হন, তাহলে সরকারের অন্যান্য অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় আরও কার্যকর হবে। এতে নীতি বাস্তবায়নের গতি বাড়বে এবং ব্যাংকের স্বাধীনতা সুসংহত হবে। গভর্নর চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২১ সালের “কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনতা কাঠামো” নামের নীতিমালার সঙ্গেও এই প্রস্তাব সামঞ্জস্যপূর্ণ। ওই কাঠামো অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বাধীনতা ও নীতিনির্ধারণ ক্ষমতা টেকসই রাখতে গভর্নরদের মর্যাদা শক্তিশালী করা জরুরি। তিনি গত সোমবার বলেন, “আমার দর্শন হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন। গভর্নরের পদ যদি পূর্ণ মন্ত্রীর সমান হয়, তবে সেই স্বায়ত্তশাসন আরও সুদৃঢ় হবে।”
অধ্যাদেশের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সরকারের প্রতিনিধি তিনজন থেকে কমিয়ে একজন করা হবে। অন্যদিকে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ সদস্য বাড়িয়ে চারজনের পরিবর্তে ছয়জন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বর্তমানে ৯ জন সদস্য আছেন। এর চেয়ারম্যান গভর্নর। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অর্থসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, একজন ডেপুটি গভর্নর এবং বেসরকারি খাত থেকে চারজন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ায় পর্ষদে সরকারের প্রতিনিধির সংখ্যা তিনজন থেকে কমিয়ে একজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিপরীতে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ সদস্যের সংখ্যা চারজন থেকে বাড়িয়ে ছয়জন করার প্রস্তাব এসেছে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর অর্থ উপদেষ্টা ও সচিবদের পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা মডেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় পেশাদারিত্ব, বৈচিত্র্য ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতেই এমন পরিবর্তন আনতে চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদে সরকারি প্রতিনিধিত্ব সীমিত। অনেক দেশের পর্ষদে এমনকি একজন সরকারি সদস্যও নেই।
গভর্নর আরও বলেন, যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদে ১২ জন সদস্যের মধ্যে গভর্নর ও দুই ডেপুটি গভর্নর বাদে বাকি ৯ জনকেই বেসরকারি খাত থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৫ সদস্যের পর্ষদ এবং জাপানের ৯ সদস্যের পর্ষদেও কোনো সরকারি প্রতিনিধি নেই।
আহসান এইচ মনসুর আরো বলেন, “অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদে একজনও সরকারি প্রতিনিধি থাকেন না। আমাদের পর্ষদে তিনজন সরকারি প্রতিনিধি থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আপত্তি জানিয়েছে।” চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, আধুনিক ও স্বায়ত্তশাসিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠনের জন্য রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। সেই লক্ষ্যেই পর্ষদে সরকারের প্রতিনিধিত্ব সীমিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগপ্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও পেশাদার করতে নতুন ব্যবস্থা নিতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, এসব পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি ও সরকারের মাধ্যমে যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে তিন সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। সার্চ কমিটির নেতৃত্ব দেবেন সাবেক অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনামন্ত্রী বা পরিকল্পনা উপদেষ্টা অথবা বিদায়ী বা সাবেক কোনো গভর্নর। কমিটির কাঠামো, কার্যপরিধি ও প্রক্রিয়া আলাদা বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর তাঁর চিঠিতে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত উপায়ে দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করা একটি আধুনিক ও স্বায়ত্তশাসিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌলিক শর্ত। তাই শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগে স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার জন্যই এই সার্চ কমিটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তা সরাসরি প্রশাসনিকভাবে নয়, বরং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে। খসড়ায় বলা হয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তিন সদস্যের একটি কমিটি, যার নেতৃত্ব দেবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপসারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে আইনি ও বিচারিক ভিত্তিতে, নির্বাহী কর্তৃপক্ষের একক সিদ্ধান্তে নয়।
এছাড়া খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব জনবলের বেতন কাঠামো নিজে নির্ধারণ করবে। নতুন পদ সৃষ্টি ও শীর্ষ পর্যায়ের নিয়োগও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্বাধীনভাবে দিতে পারবে। তবে সাবেক ব্যাংকারদের অনেকে বলছেন, যদি গভর্নর মন্ত্রীর সমমর্যাদা পান, তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে নীতি সমন্বয়ের বদলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে।
ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা আনতে সমন্বিত তদারক কাঠামো গঠনের প্রস্তাব:
ব্যাংক খাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বার্থের সংঘাত রোধ করে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ায় নতুন একটি অনুচ্ছেদ সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি আধুনিক ও সমন্বিত তদারক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মতে, এই কাঠামো ব্যাংক খাতে অনৈতিক কার্যক্রম, তথ্য গোপন, স্বজনপ্রীতি ও একচেটিয়া আচরণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এতে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিত হবে।
খসড়া অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, নীতি বাস্তবায়নে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরতা কমাতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিজস্ব বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হবে। এতে ব্যাংকের নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগে স্বাধীনতা বাড়বে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বর্তমানে ৩ কোটি টাকা। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এই পরিমাণ ৩৩ গুণের বেশি বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গভর্নরের জবাবদিহি ও ক্ষমতার সীমা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে:
বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া নিয়ে দেশের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলায় দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অতি ক্ষমতাশালী করলে জবাবদিহি কীভাবে নিশ্চিত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জবাবদিহি থাকবে জাতীয় সংসদের কাছে। সংসদীয় কমিটি ব্যাংকের কর্মকাণ্ড বিচার-বিশ্লেষণ করবে এবং প্রয়োজন হলে শুনানি নেবে। তিনি বলেন, “কমিটিতে সরকারি দল ও বিরোধী দলের সমান সদস্য থাকলে কার্যকরতা বাড়বে। অতীতে এই বিষয়ে কোনো ভালো উদাহরণ দেখা যায়নি।”
তবে সাবেক ব্যাংকাররা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, যদি গভর্নর মন্ত্রীর সমমর্যাদা পান, তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে নীতি সমন্বয়ের বদলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে। পর্ষদে সরকারি প্রতিনিধি কমলে জবাবদিহি–ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া নীতি নির্ধারণে জনস্বার্থ ও রাজস্বনীতির দিকও উপেক্ষিত হতে পারে। উন্নত দেশে স্বাধীন সদস্য থাকলেও সেখানে কঠোর জবাবদিহি কাঠামো থাকে।
সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও সাবেক পর্ষদ সদস্য মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “গভর্নরের পদমর্যাদা পূর্ণ মন্ত্রীর সমান হওয়াটা বড় কথা নয়। দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন হচ্ছে কি না, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বেতন বা ক্ষমতা বাড়িয়ে এবং মন্ত্রীর মর্যাদা দিলেই যে ভালো কিছু হবে, তা নিশ্চিত নয়। এটা অনেকটা ব্যক্তির ওপরও নির্ভর করে।” তিনি আরও যোগ করেন, “গভর্নরকে ক্ষমতাবান করা দরকার। তবে তাঁর ও তাঁর দপ্তরের জবাবদিহির জায়গা পরিষ্কার হতে হবে। অতিরিক্ত স্বাধীনতা স্বৈরাচারী ও পরাক্রমশালী হওয়ার পথও তৈরি করতে পারে।

