ভারতে এক সময় ‘হলুদ সোনা’ নামে খ্যাত সয়াবিনের চাষে কৃষকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিভিন্ন কারণে তারা এখন সয়াবিন চাষে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মধ্য প্রদেশের ইন্দোরের মুরাদপুরা গ্রামের তরুণ কৃষক অরবিন্দ সিং রাঠোর জানান, তিনি এখন কৃষি ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে চাইছেন। কারণ, সয়াবিন চাষে আর লাভ নেই। অরবিন্দের পরিবার তিন প্রজন্ম ধরে সয়াবিন চাষ করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে ফলন অর্ধেকেরও কমে গেছে এবং দামও ১৫ বছর আগের তুলনায় কম।
অরবিন্দ বলেন, “এখন প্রতি একরে দুই থেকে আড়াই কুইন্টাল সয়াবিন ফলন হয়। একসময় চার কুইন্টালের বেশি ফলন হত। দামও এক হাজার রুপি কমে গেছে। বিকল্প ফসল, যেমন ভুট্টা চাষ করলেও নীলগাইয়ের উপদ্রব আছে।” তিনি সতর্ক করেন, “সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি শুরু করে, তাহলে দেশীয় কৃষকরা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।”
চলতি খরিফ মৌসুমে ভারত সরকার প্রতি কুইন্টালে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ৫ হাজার ৩২৮ রুপি ঘোষণা করেছে। কিন্তু ইন্দোরের ছাওয়ানি বাজারে কৃষকরা এখন মাত্র তিন হাজার রুপিতে সয়াবিন বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অরবিন্দ বলেন, “সরকার বলছে এমএসপি দিচ্ছে, কিন্তু আমরা পাচ্ছি অর্ধেকেরও কম।”
সরকারি তথ্যমতে, ২০২৫ সালের খরিফ মৌসুমে তেলবীজ চাষের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় এক কোটি ছয় লাখ হেক্টর কমেছে। এর মধ্যে শুধু সয়াবিনেই কমেছে নয় লাখ হেক্টরের বেশি। ভারতের মোট সয়াবিন উৎপাদনের ৪০ শতাংশেরও বেশি মধ্য প্রদেশে হয়।
দিলীপ সিং নামের আরেক কৃষক বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষরা আগে মিলেট ও ডাল চাষ করতেন। সরকার আমাদের সয়াবিনে উৎসাহিত করেছিল। এখন মিলেটের দাম বেড়েছে, সয়াবিনের দাম কমেছে।” তিনি জানান, ২০১৪ সালে কুইন্টালপ্রতি সয়াবিনের দাম ছিল ৪ হাজার ২০০ রুপি। এখন তা নেমে এসেছে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ রুপিতে।
সরকারি ‘ভবন্তর ভূগতান যোজনা’ নিয়েও কৃষকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অরবিন্দ বলেন, “এটা প্রতারণার মতো। সরকার এক দাম বলে, বাস্তবে আরেক দাম দেয়। প্রতি একরে ইনপুট খরচই আট থেকে ১০ হাজার রুপি, তার ওপর মেশিন চালাতে লাগে তিন হাজার রুপি পর্যন্ত।”
সয়াবিন প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এসওপিএ)-এর নির্বাহী পরিচালক ডি.এন. পাঠক সতর্ক করেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি শুরু হয়, তাহলে আমাদের শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। কৃষকরাও টিকতে পারবে না। আমরা এখন প্রতি টনে ৬২০ ডলারে সয়াবিন উৎপাদন করি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দাম ৩৮০ ডলার। আমদানি হলে দেশীয় পণ্য বিক্রি হবে না।”
সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা (এসকেএম)-এর সদস্য কেদার সিরোহি বলেন, “মধ্য প্রদেশের অর্থনীতি সয়াবিনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু নিম্নমানের বীজ ও বাজারদরের পতনের কারণে উৎপাদন কমছে। এবারের ফলন গত বছরের তুলনায় ২০ লাখ মেট্রিক টন কম হতে পারে।” ছাওয়ানি শস্যবাজারের ব্যবসায়ী কৈলাশ পারথানি জানান, “আগে মাসে ছয় হাজার টন পর্যন্ত সয়াবিন বিক্রি হত। এখন তা দুই হাজার টনে নেমে এসেছে। আমদানি হলে ব্যবসায়ী ও কৃষক—দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

