আগামী রমজানকে সামনে রেখে দেশে নয় ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি গড়ে ১৭ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চিনি, সয়াবিন তেল, ডাল, ছোলা, মটর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও খেজুরের আমদানি গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো পণ্যের আমদানি বেড়েছে প্রায় ২৯৪ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই নয় পণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৮৬৭ টন। গত বছর একই সময়ে ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার ৯৪৬ টন। সামগ্রিকভাবে আমদানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মটর ডালের আমদানি। এ বছর দুই মাসে মটর ডাল এসেছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৮১০ টন, যা গত বছরের তুলনায় ২৯৪ শতাংশ বেশি। এরপর খেজুরের আমদানি বেড়েছে ২৩১ শতাংশ। এ সময় খেজুর এসেছে ১০ হাজার ১৬৫ টন। ডালজাতীয় পণ্য আমদানি ৮৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৩৫৫ টন। সয়াবিন তেল আমদানি ৩৬ শতাংশ এবং চিনি আমদানি ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা আমদানি কমেছে। এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র ২০৩ টন। গত বছর ছিল এক লাখ ২৮ হাজার ৩৭ টন। ফলে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে ৯৯ শতাংশ। রসুন আমদানি কমেছে ৮৯ শতাংশ এবং আদা কমেছে ২২ শতাংশ।
পণ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের পেঁয়াজের বড় অংশ ভারত থেকে আসে। তবে এ বছর উৎপাদন ভালো থাকায় আমদানি বন্ধ রাখা হয়। মাঝখানে সীমিত পরিসরে কিছু আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও পরিমাণ ছিল কম। ফলে মোট আমদানি কমে গেছে। ব্যবসায়ীদের মতে, চলতি বছর পেঁয়াজ আমদানি কম থাকায় বাজার দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল ছিল। অক্টোবর পর্যন্ত সরবরাহ ভালো থাকলেও নভেম্বরের শুরুতে সরবরাহ কমে যায় এবং দাম দ্রুত বাড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, এ বছর ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক। ছোট-বড় সব আমদানিকারকই প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আনতে পারবে। রমজানকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় আমদানি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, রমজানে বাজারে কোনো ঘাটতি বা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হবে না। সরকার বাজার তদারকি জোরদার করলে কিছু পণ্যের দাম কমতেও পারে।
রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ১১ নভেম্বর ১০টি পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার সময় নগদ মার্জিন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দেয়। ফলে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুরের সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কমার সম্ভাবনাও রয়েছে। নির্দেশনাটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে এবং ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এর আগে রমজান মৌসুমে এসব পণ্যের আমদানিতে সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ মার্জিন বাধ্যতামূলক ছিল। পরে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় মার্জিন কমানোর সুযোগ দেওয়া হয়, যা সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখতে ব্যাংকগুলোকে এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ১২ নভেম্বর দেওয়া আরেক নির্দেশনায় বলা হয়, রোজার পণ্য চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর আমদানিতে ৯০ দিনের বাকির সুবিধা দেওয়া হবে।

