হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে সাময়িকভাবে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার পর তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। রোববার (২০ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ একটি রায়ে জানিয়েছে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়ার পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হয়েছে এবং এই বিচারক ও অন্যান্য বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করবে এই কাউন্সিল।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত বেঞ্চ না দেওয়ার ঘোষণা দেয়, যার ফলে তাঁরা বিচারকাজ থেকে বিরত থাকবেন। এই পদক্ষেপটি আসে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও ও বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ‘ফ্যাসিস্ট সরকারে সহযোগী ও দলবাজ বিচারপতিদের’ পদত্যাগের দাবি জানায়। ঐদিন ওই বিচারপতিদের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাঁদেরকে বিচারকাজ থেকে দূরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে, গত সরকারের আমলে আরও তিনজন বিচারপতিকে তাঁদের বিচারিক ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। এই ১৫ বিচারকের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণ বা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এখন এসব অভিযোগ তদন্ত করবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ও রিভিউ আবেদন-
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাশ করে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করেছিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেটি বাতিল করে দিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখে। সরকারের পক্ষ থেকে এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হয়, যার শুনানি শেষ হয় ২০ অক্টোবর। আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ রায়ে পুনরায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমেই বিচারপতিদের অপসারণের ব্যবস্থা বহাল রাখেন। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচারপতিদের অপসারণের প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম-
এই রায়ের ফলে, বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেটি তদন্ত করে দেখবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। বিচারপতিদের পেশাগত অসদাচরণ বা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শেষে কাউন্সিল তাদের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ আকারে পাঠাবে। রাষ্ট্রপতি সেই সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জানান, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ফলে বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিচার এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলেই হবে। তিনি বলেন, যদি বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আর্থিক বা মানসিক অসততা কিংবা পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ থাকে, সেটি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠানো হবে, যেখানে তদন্ত করে বিচারপতির নির্দোষতা বা দোষ প্রমাণ করা হবে।
অপরদিকে আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তিন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়, যেখানে প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের দুই সিনিয়র বিচারপতি থাকেন। অভিযোগের প্রাথমিক রূপটি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে হয়। তবে কাউন্সিল কোনো অভিযোগ পেলে স্বপ্রণোদিতভাবেও তদন্ত শুরু করতে পারে এবং রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে পারে।
এই প্রক্রিয়াটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।