গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না’’। একই সঙ্গে ৩৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘‘জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও পুনঃপ্রবেশের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে’’।
এই অধিকার অনুযায়ী, যদি কোন নারী রাস্তায় বা কর্মক্ষেত্রে টিজিং-এর শিকার হন, তা সংবিধানের অধিকার হরণ হিসেবে ধরা যায়। এ ধরনের আচরণ শুধু সামাজিক নয়, আইনতও শাস্তিযোগ্য।
দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘যে ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করে (ক) কোন প্রকাশ্য স্থানে অশ্লীল কার্য করে অথবা (খ) প্রকাশ্য স্থানে বা সন্নিকটে অশ্লীল গান, পদাবলী বা আবৃত্তি করে, সেই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের শাস্তির অধীনে থাকবে।’’ আইনটি থাকা সত্ত্বেও কার্যকর প্রয়োগ প্রায় দেখা যায় না। এ আইন ছোট ছোট ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক।
দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘যে ব্যক্তি নারীর শালীনতা অমর্যাদা করার উদ্দেশ্যে মন্তব্য, শব্দ, অঙ্গভঙ্গি বা বস্তু প্রদর্শন করে অথবা উক্ত নারীর নির্জন বাসায় অনধিকার প্রবেশ করে, সেই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’’ এই ধারা কার্যকর হলে ইভটিজিং অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশও ইভটিজিং নিয়ন্ত্রণের বিধান রেখেছে। অধ্যাদেশের ৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘যদি কেউ রাস্তা বা সাধারণ ব্যবহারের স্থানে অশ্লীলভাবে নিজদেহ প্রদর্শন করে বা কোনো নারীকে পীড়িত বা পথরোধ করে, অথবা অশ্লীল ভাষা, আওয়াজ, অঙ্গভঙ্গি বা মন্তব্যের মাধ্যমে বিরক্ত করে, তবে সেই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা ২ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের অধীনে দণ্ডিত হবেন।’’ এছাড়া ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘সর্বসাধারণের অশালীন বা উশৃঙ্খল আচরণের জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’’
আইন থাকলেও বাস্তবায়নের অভাব, সামাজিক সচেতনতার ঘাটতি এবং অপরাধীদের নির্লিপ্ততা ইভটিজিং প্রতিরোধে প্রধান চ্যালেঞ্জ। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য।