চীনে গত ২৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন “ইনফ্লুয়েন্সার আইন”। এই আইনের অধীনে এখন থেকে চিকিৎসা, আইন, শিক্ষা ও অর্থনীতি বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করতে হলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সরকারি স্বীকৃত ডিগ্রি, লাইসেন্স বা সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক।
চীনের সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, এ উদ্যোগের লক্ষ্য ভুয়া তথ্য, বিভ্রান্তিকর পরামর্শ ও অনলাইন প্রতারণা ঠেকানো। একই সঙ্গে জনগণকে সঠিক ও নিরাপদ তথ্য নিশ্চিত করাই এই আইনের মূল উদ্দেশ্য। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, এসব সংবেদনশীল বিষয়ে কনটেন্ট নির্মাতাদের নিজেদের পেশাগত যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—যেমন ডওইন, বিলিবিলি ও ওয়েইবো—তাদের ব্যবহারকারীদের তথ্য যাচাই করবে। পাশাপাশি নিশ্চিত করবে যে সংশ্লিষ্ট কনটেন্টে সঠিক সূত্র, গবেষণার উল্লেখ ও প্রয়োজনীয় ডিসক্লেইমার রয়েছে।
কনটেন্ট নির্মাতাদের আরও জানাতে হবে কোন তথ্য গবেষণাভিত্তিক, আর কোনটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি। একই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহারকারীদের সচেতন করতে হবে অনলাইন কনটেন্ট তৈরিতে তাদের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব সম্পর্কে। এর পাশাপাশি, চিকিৎসা পণ্য, খাদ্য পরিপূরক ও হেলথ ফুড সম্পর্কিত বিজ্ঞাপনও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে Cyberspace Administration of China (CAC)। তাদের যুক্তি, “শিক্ষামূলক ভিডিও”র আড়ালে লুকানো প্রচারণা বন্ধ করাই এই পদক্ষেপের লক্ষ্য।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই আইন সৃজনশীলতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা তৈরি করতে পারে। তাদের মতে, কর্তৃপক্ষ যদি “বিশেষজ্ঞ” শব্দটির সংজ্ঞা সংকীর্ণভাবে নির্ধারণ করে, তাহলে স্বাধীন চিন্তা ও বিকল্প মতামতের জায়গা কমে যাবে। অন্যদিকে, আইনটির সমর্থকরা বলছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহে সহায়তা করবে। তাদের দাবি, এসব বিষয়ে কেবল পেশাদারদেরই কথা বলা উচিত, যাতে বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিস্তার রোধ করা যায়।
বিশ্বজুড়ে ইনফ্লুয়েন্সার সংস্কৃতি এখন মানুষের তথ্য জানার বড় মাধ্যম। প্রভাবশালীরা সহজভাবে জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারেন, যা অনেক সময় প্রচলিত বিশেষজ্ঞরা পারেন না। কিন্তু ভুল তথ্য ছড়ালে তার ক্ষতি হতে পারে ভয়াবহ। এই কারণেই নতুন আইনকে প্রয়োজনীয় মনে করছে চীনা কর্তৃপক্ষ।

