প্রয়াত বিচারপতি গোলাম রাব্বানী এর লেখা-
১৯১৮ সালে ‘আমাদের ভাষা সমস্যা’ শিরোনামে এক বক্তৃতায় শহীদুল্লাহ বলেন, “আমরা বঙ্গদেশবাসী। আমাদের কথাবার্তার, ভয়-ভালবাসার, চিন্তা-কল্পনার ভাষা বাংলা। তাই আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন্ ভাষা কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিয়া পরান আকুল করে? মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন্ ভাষার ধুনির জন্য প্রবাসীর কান পিয়াসী থাকে? মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন্ ভাষায় কল্পনা-সুন্দরী তাহার মন-মজান ভাবের ছবি আঁকে? কাহার হৃদয় এত পাষাণ যে মাতৃভাষার অনুরাগ তাহাতে জাগে না? পৃথিবীর ইতিহাস আলোচনা করিয়া দেখ মাতৃভাষার উন্নতি ব্যতীত কোনও জাতি কখনও কি বড় হইতে পারিয়াছে? আরব পারস্যকে জয় করিয়াছিল। পারস্য আরবের ধর্মের নিকট মাথা নীচু করিয়াছিল, কিন্তু আরবের ভাষা লয় নাই; শুধু লইয়াছিল তাহার ধর্মভাব আর কতকগুলি শব্দ। তাই আনোয়ারী, ফারদৌসী, সাদী, হাফিয, নিযামী, জামী, সানাই, রূমী প্রমুখ কবি ও সাধক-বুলবুলকুলের কলতানে আজ ঈরানের কুঞ্জকানন মুখরিত। যে দিন ওয়াইক্লিফ লাটিন ছাড়িয়া ইংরেজী ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ করিলেন, সেই দিন ইংরেজের ভাগ্যলক্ষ্মী সুপ্রসন্ন হইল। যতদিন পর্যন্ত জার্মানিতে জার্মান ভাষা অসভ্য ভাষা বলিয়া পরিগণিত ছিল, তত দিন পর্যন্ত জার্মানির জাতীয় জীবনের বিকাশ হয় নাই।”
১৯৩৮ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাভাষা-পরিচয়’ বইয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন, “আমাদের দেহের মধ্যে নানাপ্রকার শরীরযন্ত্রে মিলে বিচিত্র কর্মপ্রণালীর যোগে শক্তি পাচ্ছে প্রাণ সমগ্রভাবে। আমরা তাদের বহন করে চলেছি কিছুই চিন্তা না করে। তাদের কোনো জায়গায় বিকার ঘটলে তবেই তার দুঃখবোধে দেহব্যবস্থা সম্বন্ধে বিশেষ করে চেতনা জেগে ওঠে। আমাদের ভাষাকেও আমরা তেমনি দিনরাত্রি বহন করে নিয়ে চলেছি। শব্দপুঞ্জে বিশেষ্য বিশেষণে সর্বনামে বচনে লিঙ্গে সন্ধি-প্রত্যয়ে এই ভাষা অত্যন্ত বিপুল এবং জটিল। অথচ তার কোনো ভার নেই আমাদের মনে, বিশেষ কোনো চিন্তা নেই। তার নিয়মগুলো কোথাও সংগত কোথাও অসংগত, তা নিয়ে পদে পদে বিচার করে চলতে হয় না।”
বাংলাভাষার দশা
১৯৬০ সালের শেষ মাসটির শেষ সপ্তাহে আমি জেলা জজ আদালতের আইনজীবির সনদ পাই এবং রাজশাহীতে আইন-ব্যবসায় শুরু করি। সে সময় মুন্সেফি (বর্তমানে সহকারী জজ) আদালতে ও সাবজজ (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমায় আরজি ও জবাব বাংলাভাষায় লেখা হতো এবং মোকদ্দমা চলাকালে অন্তবর্তীকালিন প্রার্থনার দরখাস্তগুলিও বাংলাভাষায় লেখা হতো। উভয় পক্ষের সাক্ষীগণ যে ভাষাটি জানেন অর্থাৎ বাংলা ভাষায় তারা সাক্ষ্য দিতেন। আইনজীবি হিসাবে আমাকে নিয়োজিত একটি মোকদ্দমায় একজন বৃদ্ধা সাঁওতাল মহিলা তার সাঁওতালি ভাষায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন এবং তার জন্য দোভাষী নিয়োগ করা হয়। কিন্তু সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরা বিচারক ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করে লিখতেন। উভয় পক্ষের আইনজীবি ইংরেজি ও বাংলা মেশানো ভাষায় যুক্তি-তর্ক পেশ করতেন। কিন্তু ইংরেজি ভাষায় রায় লেখা হতো। এই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে যে আপিল দায়ের করা হতো তার স্মারকলিপিটি যেটায় রায়ের বিরুদ্ধে অজুহাতগুলি লেখা থাকতো সেটা ইংরেজিতে লেখা হতো এবং আপিল শুনানীকালে উভয় পক্ষের আইনজীবি ইংরেজিতে যুক্তি-তর্ক পেশ করতেন। আপিলের রায় ইংরেজিতে লিখা হতো। ফৌজদারি মোকদ্দমায় সাক্ষীগন বাংলা ভাষায় সাক্ষ্য দিতেন। কিন্তু তাদের জবানবন্দি ও জেরা ইংরেজিতে লেখা হতো এবং রায়ও ইংরেজিতে দেয়া হতো। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে আমি ঢাকা হাইকোর্টে আইনব্যবসায় শুরু করি তখন পুরাপুরি ইংরেজি ভাষা চালু ছিল।
এখন ২০০৪ সালের কথা বলি। সহকারী জজ কিংবা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমায় আরজি, জবাব ও দরখাস্তগুলি আগের মতো বাংলাভাষায় লেখা হচ্ছে এবং তদোপরি সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরাও বাংলাভাষায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে। তবে আগের মতো যুক্তি-তর্ক ইংরেজি ও বাংলা মেশানো ভাষায় পেশ করা হচ্ছে। এখন বিচারকগণ অধিকাংশ রায় বাংলায় ও কিছু রায় ইংরেজিতে দিচ্ছেন। রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলগুলির স্মারকলিপির অধিকাংশ আগের মতোই ইংরেজিতে লেখা হচ্ছে এবং আপিলের রায়গুলির অধিকাংশ ইংরেজিতে এবং কিছু বাংলায় দেয়া হচ্ছে। এখন ফৌজদারি মোকদ্দমায় সাক্ষীদের জবানবন্দি-জেরা তাদের বলামতো বাংলায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে এবং রায়গুলির অধিকাংশ বাংলায় ও কিছু ইংরেজীতে লেখা হচ্ছে। সুপ্রীম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগে আগের মতো পুরাপুরি ইংরেজি ভাষা চালু আছে এবং এর সামান্য ব্যতিক্রম হচ্ছে যে আইনজীবিরা তাদের যুক্তি-তর্ক পেশ করার সময় মাঝে মধ্যে কিছু বাংলায় পেশ করছেন বিশেষ করে হাইকোর্ট বিভাগে যেটা আগের কালে গ্রহণ ও সহ্য করা হতো না।

সংবিধান সমাচার
১৯৬৬ ১৯৬৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকা হাইকোর্টের একজন আইনজীবি শামশুদ্দিন আহম্মদ একটি ফৌজদারি রিভিশনের দরখাস্ত বাংলায় লেখেন এবং হাইকোর্টের বিধি অনুযায়ী দরখাস্তটির লিখিত বিবরণের পোষকতায় দরখাস্তকারীর পক্ষে একজন তদবিরকারক কর্তৃক হলফ সংযুক্ত করানো জন্য নির্দিষ্ট কর্মচারীর নিকট যান। কিন্তু দরখাস্তটি ইংরেজিতে লেখা হয় নি এই আপত্তিতে সেটা হলফকৃত করতে অস্বীকার করা হয়। ঘটনাটি হাইকোর্টের একটি একক বিচারপতির বেঞ্চে উল্লেখ করা হয় এবং বিচারপতি বিষয়টি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের দৃষ্টিগোচরে আনতে বলেন। সেমত আইনজীবি রেজিস্ট্রারকে একটি অভিযোগপত্রসহ বাংলায় লিখিত ফৌজদারি রিভিশনের দরখাস্তটি দেন এবং রেজিষ্ট্রার লিখিত আদেশ দেন যে দরখাস্তটি বাংলায় লিখিত হওয়ায় সেটা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আইনজীবিকে ফেরত দেয়া হলো। অতঃপর রেজিষ্ট্রারের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা হাইকোর্টে রীট পিটিশন করা হয়। কিন্তু একটি দ্বৈত বেঞ্চ রীট পিটিশনটি সরাসরি খারিজ করে দেয় এবং তার বিরুদ্ধে তদানিন্তন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করা হয় এই অজুহাতে যে রেজিষ্ট্রারের তর্কিত আদেশটি সংবিধানের ২১৫ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। উল্লেখ্য, সুপ্রিমকোর্টে দায়ের করা আপিলের স্মারকলিপিটিও বাংলায় লেখা হয় এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আদেশে সেটা ইংরেজীতে অনুবাদ করা হয়।
এখন পাকিস্তানের ১৯৬২ সালের সবিধানের ২১৫ অনুচ্ছেদের অনুদিত উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ “২১৫-(১) পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হচ্ছে বাংলা এবং উর্দু, তবে এই অনুচ্ছেদটির অর্থ এই নয় যে অন্য কোন ভাষা ব্যবহারের বাধা থাকবে এবং বিশেষভাবে ইংরেজি ভাষা সরকারি ও অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে যে পর্যন্ত না এর পরিবর্তনের জন্য উপযোগীকরণ ব্যবস্থা করা হবে। (২) সরকারি প্রয়োজনে ইংরেজি ভাষা পরিবর্তনের বিষয়টি পরীক্ষা ও রিপোর্ট করার জন্য রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালে একটি কমিশন গঠন করবেন।”
প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচজন বিচারপতির সম্বন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চে আপিলটির মঞ্জুরি শুনানী হয় এবং সেটা সরাসরি খারিজ করা হয় এই অজুহাতে যে সংবিধানের ২১৫ অনুচ্ছেদটির ব্যতিক্রমধর্মী দ্বিতীয় অংশটির উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথম অংশে প্রদত্ত অধিকারকে স্থগিত রাখা যে পর্যন্ত না ইংরেজি ভাষা পরিবর্তনের জন্য উপযোগীকরণ ব্যবস্থা করা হয়। রায়টি ১৯৬৭ সালের ‘ঢাকা ল’ রিপোর্টস’ এর সুপ্রিম কোর্ট খন্ডের ৪৮৩-৪৮৬ পৃষ্ঠায় ছাপা আছে।
এবার বাংলাদেশের সংবিধান পড়া যাকা। অবশ্যই এই কথাটি মনে রেখে যে আমাদের সংবিধান যখন তৈরি হয়েছিল তখন সংবিধান প্রণেতাগণ চিন্তা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃতপক্ষে কী কাম্য হতে পারে এবং সংবিধান প্রণয়নকালে সেটাকে উপেক্ষা করার সাহস তাদের ছিল না। সংবিধানের ৩য় অনুচ্ছেদটির উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।” এই সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট অনুচ্ছেদে অন্তর্বতীকালিন কোন সময়ের জন্য ইংরেজি ভাষাকে ব্যবহার করার নির্দেশনা নেই। অথবা এটা বলা সঠিক হবে যে পাকিস্তানের সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদটির মতো ইংরেজি ভাষার পক্ষে কোন শর্তযুক্ত অনুচ্ছেদ লিখতে সংবিধান প্রণেতাগণ সাহস পাননি। তদোপরি ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’ শিরোনামযুক্ত বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ২৩শ অনুচ্ছেদটি যেটি ৩য় অনুচ্ছেদ সম্পর্কীয় তার দিগনির্দেশ এইঃ “রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করিবে, যাহাতে সর্বস্তরের জনগন জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহন করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারে।”
একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলি। যারা আইন ব্যবসা করেন কিংবা যারা আদালতে বিচার করেন তাদের বাংলাভাষার জ্ঞান পর্যাপ্ত নয়। তবে করণীয় কি? আইনে স্নাতক উপাধির পাঠ্যক্রমের একটি বিষয় থাকবে বাংলা সাহিত্য এবং বাংলাভাষায় আরজি, জবাব, দরখাস্ত ও রায় লিখন বিষয়ক আর একটি বিষয় থাকবে। এর ফলে আগামী আইনজীবিদের তাদের পেশার জন্য এবং বিচারকদের তাদের কাজের জন্য বাংলা ভাষার জ্ঞান পর্যাপ্ত হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে অন্তবর্তীকালীন কার্যক্রম কি হবে? প্রথমত একাধিক কর্মশালা গঠন করতে হবে যেখানে বাংলা সাহিত্য বিষয়ে পঠন ও আলোচনা অব্যাহত থাকবে। একটি মোকদ্দমা কিংবা রিভিশন কিংবা আপিলের চূড়ান্ত হচ্ছে রায় যার লক্ষ্য থাকে বিবাদমান পক্ষদ্বয়ের একজনের পক্ষে ও অপরজনের বিপক্ষেও সিদ্ধান্ত দিয়ে উভয় পক্ষকে ন্যায়ানুগত রাখা। এখন প্রবন্ধ আধুনিক সাহিত্যের প্রধান মাধ্যম বিবেচিত হচ্ছে এবং আদালতের রায়কে একটি প্রবন্ধ বলতেই হয়। সুতরাং রায়ের চরিত্র হবে বিবরণে বিশ্লেষণে এবং শব্দ ব্যবহারে ভিন্ন মাত্রার প্রত্যাশিত ও প্রশংসিত এক প্রবন্ধশৈলী। দ্বিতীয়ত একটি অনুবাদকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে ইংরেজি ভাষায় লেখা বিচার কাজে দরকারি বইগুলির এবং নিম্ন আদালতের জন্য নজিরযোগ্য সুপ্রিমকোর্টের রায়গুলির অনুবাদ করা হবে। নতুবা অনির্দিষ্টকাল আদালতে বাংলা-ইংরেজি মিশাল ভাষায় আইনজীবিদেরকে যুক্তি-তর্ক পেশ করতে হবে ও বিচারকদেরকে রায় লিখতে হবে।
ইংল্যান্ডের সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি প্রয়াত লর্ড ডেনিং ন্যায়-অন্যায় নিরূপণে যে পদ্ধতি অনুসরণ করতেন তা শ্রদ্ধা ও বিস্ময়ের সঙ্গে এখনো স্মরণ করা হয়। জ্ঞানের উপলব্ধিসহ হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে ক্ষমার মিশ্রণে তিনি রায় দেয়ায় তার বিচার এমন সহনীয় হতো, যা বিবাদমান উভয়পক্ষের অনুযোগমুক্ত ছিল। লর্ড ডেনিংয়ের লেখা প্রথম বই ‘দি ডিসিপ্লিন অব ল’ এর প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম হচ্ছে “ভাষার উপর কর্তৃত্ব” এবং এই অধ্যায়ে “আইন-পেশায় কৃতকার্য হতে হলে তোমাকে ভাষার উপর কর্তৃত্ব ফলানো অর্জনের জন্য চেষ্টা করতে হবে” এই বাক্যটি প্রথমে লিখে তারপর তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন। প্রথমে তার মাতৃভাষার নামী লেখকদের বই পাঠ করে তিনি বিচিত্র ও বিস্তর শব্দ আয়ত্ব করলেন এবং অভিধানের সাহায্যে তাদের ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্য জানলেন। অতঃপর একজন পিয়ানোবাদক যেমন পিয়ানো অনুশীলন করে তেমন তিনি একান্তে তার আয়ত্তে আসা শব্দগুলির অনুশীলন করতে লাগলেন। ভেবে চিন্তে একটি বাক্য লিখলেন, কাটাকুটি করলেন, আবার লিখলেন, কিছু বদলালেন এবং আবার লিখলেন।
হীনম্মন্যতার ভূত
জাত্যাভিমান মানুষের অর্জিত বৈশিষ্ট্য যা স্বদেশীয় সংস্কৃতির অনুরাগ থেকে চেতনায় বাহিত হয়। এই চেতনা রুদ্ধ হয় যখন একজন কোক কিংবা পেপসি খান, একজন সনি কিংবা অন্য কোন ব্র্যান্ডের টেলিভিশন নিজ ঘরে রাখেন, একজন শার্প কিংবা অন্য কোন ব্র্যান্ডের রেফ্রিজেটর ব্যবহার করেন, একজন টয়োটা কিংবা অন্য কোন ব্র্যান্ডের মটর গাড়ীতে ঘুরে বেড়ান এবং নিজেকে বৈশ্বিক ভোক্তা শ্রেণীর একজন মনে করেন। বিদেশী পণ্য ভোগ করার আনন্দে গর্ব বোধ করেন।
সেটেলাইট সংযোগের কারণে টেলিভিশনে যখন তিনি বিদেশী পণ্য-সংস্কৃতির অনুষ্ঠানগুলি দেখেন তখন নিজেকে আর তার স্বদেশী মনে হয় না। টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখার সময় এদের কেউ ইংল্যান্ডের দলের পক্ষে এবং কেউ পাকিস্তানের দলের পক্ষে অযথা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং পছন্দের দলের পক্ষে তর্ক জুড়ে দেন। আত্মপরিচয় মনে থাকে না।
ক্রমশ এই মানসিকতা স্বদেশী আত্মঅহংকার বিস্মৃতি করায়। তখন স্বদেশকে ক্ষুদ্র মনে হয়, মাতৃভাষাকে তুচ্ছ মনে হয়। এই কারণে, সঠিক বলতে গেলে অবচেতন এই কারণে, সুপ্রিমকোর্টে স্বউদ্যোগে স্বেচ্ছায় বাংলাভাষা চালু হচ্ছে না এবং নিম্ন আদালতের বিচারকদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে পদোন্নতি বিবেচনার সময়ে তাদের ইংরেজিতে লেখা কমপক্ষে তিনটি রায়ের প্রয়োজন হবে।