মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সীমান্তবর্তী সাবাজপুর চা বাগান দখলের অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা চলছে। ২০০৭ সালে স্কয়ার গ্রুপ ইজারা নেওয়া এই বাগানের প্রায় ৫৪০ একর জমি দখলে নিয়েছে স্থানীয় একটি গোষ্ঠী। তারা সেখানে ঘর তুলেছে, কলা, পান ও সবজি চাষ করছে।
এই দখলদার গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. নিয়াজ, মো. ইব্রাহিম, আবদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, দখলদারদের পেছনে আছেন সাবেক বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, বড়লেখা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সুয়েব আহমদ। দখলদাররা বোবারথল, ইসলামপুর এবং আশপাশের গ্রাম থেকে এসে দলবদ্ধভাবে বাগানের জমি দখলে নিয়েছে।
২০২২ সালের ১৮ জুন দখলের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমদিকে দখলদাররা ছোট ছোট দল নিয়ে টিলার ওপর ঘর তোলে। এরপর জমির আরও অংশে চাষাবাদ শুরু করে। দুই বছরে দখলদারদের এই দল আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এই দখল সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্কয়ার গ্রুপের করপোরেট হেড অফিসের ডিজিএম মেজর নুরুজ্জামান (অব.) বলেন, “দখলদাররা চা গাছ কেটে, বাঁশ বিক্রি করে আর্থিকভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা জমিতে প্রবেশও করতে পারি না। সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।”
বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দয়াময় বিশ্বাস জানান, দখলদারদের বাধার মুখে বাগানের শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না। চা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর আড়াই শতাংশ জমিতে নতুন চা বাগান তৈরি করতে হয়। দখলের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না, ফলে চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
এদিকে প্রশাসন এ বিষয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছে। তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, “সম্প্রতি এই অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সমাধানে কাজ করছি। জরিপ পরিচালনার পাশাপাশি বিরোধপূর্ণ এলাকার গাছ কাটায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।”
সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। জমি দখলমুক্ত করতে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি। সীমানা নির্ধারণের জন্য সঠিকভাবে সার্ভে পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণই এই সংকটের সমাধান করতে পারে।
বর্তমানে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জমি বাগান কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দখলদাররা সেখানে কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বাগানের অর্থনৈতিক ক্ষতি অব্যাহত রয়েছে এবং সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
সীমান্তবর্তী এই চা বাগানের সংকট শুধু একটি প্রতিষ্ঠান বা এলাকার সমস্যা নয়; এটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতের স্থিতিশীলতার ওপর বড় হুমকি। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।