দিনাজপুরের সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দালালদের মাধ্যমে কাজ করানো কিংবা সরকারি ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে এবার সরাসরি সরকারি দফতরের কেউ না হয়েও ভূমি অফিসের কম্পিউটারে বসে সেবা প্রদান ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিজন সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে সরকারি ফি’র চেয়ে ১০ থেকে ৪০ গুণ বেশি অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, ভূমি অফিসের কম্পিউটারে বসে কাজ করছেন স্বপন রায় নামের এক ব্যক্তি যিনি সরকারি কর্মচারী নন। ভূমি অফিসে জমির খাজনা দিতে আসা মানুষদের কাজ তিনি নিজেই করে দিচ্ছেন এবং বিনিময়ে চাহিদা অনুযায়ী টাকা নিচ্ছেন। অফিসের বারান্দায় উপস্থিত ঝাড়ুদার সাগর আগত ব্যক্তিদের সমস্যার কথা শুনে সরাসরি স্বপনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অফিস সহায়ক আজাহার আলীও একইভাবে সেবা প্রত্যাশীদের স্বপনের কাছে পাঠাচ্ছেন। অথচ কার্যালয়ের তহশিলদার আবুল কাশেম অফিসেই বসে থাকছেন কিন্তু এই অনিয়ম সম্পর্কে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, জমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে গেলে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় নতুবা হয়রানির শিকার হতে হয়। কৃষক ফিরোজুল ইসলাম জানান, ২৯ শতক জমির খাজনা দিতে গিয়ে তার কাছে ২৪ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। টাকা না দেওয়ায় তার কাজ সম্পন্ন হয়নি।
সিরাজুল নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘কোনো কাজ করতে গেলেই নানা অজুহাতে টাকা দাবি করা হয়। প্রথমে চার হাজার, পরে এক হাজার-দুই হাজার করে চাঁদার মতো টাকা দিতে হয়। তারপরও কাজ ঠিকভাবে হয় না।’
একজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমরা তো স্বাক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ। কম্পিউটারে কী দেখায় বুঝি না। যা বলে তাই দিতে হয়। ৫০ টাকার খাজনা পরিশোধের জন্য ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপন রায় স্বীকার করেন, তিনি সরকারি কর্মকর্তা নন বরং মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে এখানে কাজ করছেন। তবে তিনি দাবি করেন, ‘মানুষ স্বেচ্ছায় দিলে নিই জোর করে টাকা নেই না।’
ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক আজাহার আলী জানান, ‘আমি তিন মাস ধরে এখানে আছি আসার পর থেকেই স্বপনকে এখানে কাজ করতে দেখছি।’
এ বিষয়ে তহশিলদার আবুল কাশেম বলেন, ‘বয়সের কারণে আমি কম্পিউটার চালাতে পারি না, তাই স্বপনকে কাজে রেখেছি। তবে তার কোনো সরকারি নিয়োগ নেই।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর আনাফ বলেন, ‘সরকারি ফি’র বেশি টাকা নেওয়া অন্যায় ও দুর্নীতি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন কি না তা জানা প্রয়োজন। একজন বাইরের ব্যক্তি কীভাবে সরকারি কাগজপত্র নিয়ে কাজ করছেন সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।’
তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল রায়হান জানান, সরকারি দফতরের কম্পিউটারে বাইরের কেউ কাজ করতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আমরা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছি এবং প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’