উত্তরাঞ্চলের সীমান্তপথগুলো হয়ে দেশে ঢুকছে বিপুল পরিমাণ হেরোইন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) বলছে, হালে সবচেয়ে বেশি হেরোইন আসছে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কুষ্টিয়ার সীমান্তপথ দিয়ে। তবে শিগগিরই এই রুট বদলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী বিভাগের সীমান্ত দিয়ে হেরোইন প্রবেশের তথ্য নিশ্চিত করেছে ডিএনসির একাধিক কর্মকর্তা। তাদের মতে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙা ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সীমান্তপথ এখন হেরোইন চোরাচালানের সক্রিয় রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ডিএনসির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে দেশে মাদক সংক্রান্ত মোট ২ হাজার ৫৯৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হেরোইন উদ্ধার হয়েছে ৭০০ কেজি। শুধু রাজশাহী বিভাগেই মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪২৭টি। ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭২টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৭৭২টি রাজশাহী বিভাগে।
ডিএনসির রাজশাহী বিভাগের উপপরিচালক জিললুর রহমান জানান, “বর্তমানে দেশের তিনটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে সবচেয়ে বেশি হেরোইন আসছে। তবে এ রুটগুলো খুব শিগগিরই পরিবর্তিত হতে পারে।” তিনি বলেন, আগে আফগানিস্তান থেকে হেরোইনের কাঁচামাল আসত। এখন সেই উৎপাদন বেশি হচ্ছে মিয়ানমারে। মিয়ানমারের কাঁচামাল ভারতে প্রবেশ করে, আর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা অঞ্চলে গড়ে ওঠা কারখানায় হেরোইন উৎপাদন হয়। সেখান থেকেই তা বাংলাদেশে ফেরত আসছে বলে তারা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছেন।
এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে রাজশাহী বিভাগের কারাগারগুলোতেও। বিভাগীয় কারা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলের আটটি কারাগারে মোট বন্দির সংখ্যা ৮ হাজার ৯৬৬ জন। এর মধ্যে মাদক মামলার আসামি ২ হাজার ৫৬২ জন। কারাগারভিত্তিক হিসাবে, রাজশাহী কারাগারে ৪৩৬ জন, বগুড়ায় ৩৬০, সিরাজগঞ্জে ৪১১, নওগাঁয় ৩১৩, পাবনায় ৪০৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৬২, নাটোরে ১৯৯ এবং জয়পুরহাটে ১৭৪ জন মাদক মামলায় বন্দি রয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি হারে মাদক মামলার আসামি রয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে। এখানে মোট বন্দির ৪৬.৩৭ শতাংশই মাদক মামলার আসামি। বিভাগজুড়ে মাদকের মামলায় গড় বন্দি হার ২৮.৫৭ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগের ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেন জানান, “আমাদের কারাগারগুলোতে এখন বন্দিদের একটি বড় অংশই মাদক মামলার আসামি। অনেকের নামে একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে।” সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশ রোধে নজরদারি বাড়ানো না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।