রাজধানীসহ দেশের ১৫টি সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় প্রকল্পটি। উদ্দেশ্য ছিল, জীবাণুবাহী বর্জ্য আলাদা করে প্রক্রিয়াজাত করা, যেন সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫ দশমিক ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে, কাগজে-কলমে খরচ দেখানো হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকারও বেশি। বাস্তবে নেই কোনো দৃশ্যমান কাজ, হয়নি অডিট, হয়নি প্রকল্প পর্যবেক্ষণ সভাও। এমনকি কোনো স্থানে সাইনবোর্ডও নেই। প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টির দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১০টিতে। তবে তাতেও রয়েছে নানা জটিলতা। বান্দরবান ও লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নকশা পরিবর্তন, রংপুর মেডিক্যাল ও মিটফোর্ডে স্থান-সংক্রান্ত জটিলতা, এবং শেরেবাংলানগরের প্লান্ট স্থানান্তর নিয়ে কাজ থেমে আছে। ফলে ভবন নির্মাণ ছাড়াই যন্ত্রপাতি স্থাপন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সরকার ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় এক বছর বাড়ালেও তাতেও কাজের গতি নেই। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের স্বাস্থ্য উইং বলছে, প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ছিল ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তবে সময় বাড়ানোর পরও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না।
ভৌত অগ্রগতি দেখানো হচ্ছে ২৫ শতাংশ, কিন্তু প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভবন এখনো নির্মীয়মাণ বা কোথাও কাজ শুরুই হয়নি। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ ই-পিএমআইএস সিস্টেম হালনাগাদ নয়, যা প্রকল্প মনিটরিংয়ের অন্যতম আধুনিক পদ্ধতি। এই প্রকল্পের ব্যয় ২৬৩৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে। অথচ এত বড় প্রকল্পেও এখন পর্যন্ত কোনো নিরীক্ষা হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এই ধীরগতিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী মনে করেন, অনেক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বিল পরিশোধ না হওয়ায় খরচ দেখানো যায় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক স্থবিরতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে শেষ সময়ে খরচ চাপিয়ে দেওয়া হয়, এতে স্বচ্ছতা বিঘ্নিত হয়। এই প্রকল্পেও এমন আশঙ্কা রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারাও বলছেন, শুধু সময় বাড়িয়ে লাভ হবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহি, গভীর নজরদারি ও প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি। তা না হলে এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পও থেকে যাবে কাগজে-কলমেই।