প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের চার সদস্য মিলে ব্যাংকটির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে সীমার বেশি অর্থ খরচ করেছেন। তিন বছরে পাঁচ সদস্য মিলে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২টি ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছেন প্রায় সাড়ে ৩২ লাখ মার্কিন ডলার। গড়ে প্রত্যেকে বছরে খরচ করেছেন প্রায় ২ লাখ ১৬ হাজার ডলার।
আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের তদন্তে জানিয়েছে, এসব লেনদেনের উদ্দেশ্য ছিল অর্থপাচার। সংস্থাটি ইতিমধ্যে প্রিমিয়ার ব্যাংককে বিষয়টি জানিয়ে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইকবালের পরিবারের চার সদস্য—মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল, মইন ইকবাল, নওরীন ইকবাল ও মইনের স্ত্রী ইয়াসনা পূজা ইকবাল—ব্যাংকটির কার্ডে অনিয়ম করেছেন। তাঁদের নামে রয়েছে ১৮টি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ও ৪টি প্রিপেইড কার্ড। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এসব কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে খরচ হয়েছে মোট ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৩১১ ডলার, যা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সীমার অনেক বেশি।
বিএফআইইউ ব্যাংকটির কাছে এই অনিয়মের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। এ বিষয়ে জানতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। জানা গেছে, প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৩০ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন এইচ বি এম ইকবাল। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করে। সেই সময় থেকেই একের পর এক অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইকবাল বর্তমানে পরিবারসহ দুবাইয়ে আছেন। তাঁর পরিবারের দুজন সদস্য অবস্থান করছেন মালয়েশিয়ায়। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ এলাকায় তাঁদের অর্ধশতাধিক সম্পদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বিএফআইইউর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদেশে কার্ড ব্যবহার করে খরচ করা অর্থের বড় অংশ ব্যয় হয়েছে দুবাইয়ে।
বিএফআইইউ আরও জানিয়েছে, রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) ও ট্রাভেল কোটার আওতায় ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হলেও এসব হিসাবের অনুমোদন ও কাগজপত্র ব্যাংকে পাওয়া যায়নি। ইকবাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঘোষণা ছাড়া বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা তাঁদের হিসাবে নগদে জমা দিয়েছেন। শুধু ইকবালের আরএফসিডি হিসাবেই ১১ লাখ ২১ হাজার ডলার নগদ জমা দিয়ে পাঁচটি ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করা হয়। বিদেশে খরচের দায় বাংলাদেশ থেকেই ডলারে পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মইন ইকবালের আরএফসিডি হিসাবে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ‘সাবলাইম গ্রীনটেক্স লিমিটেড’-এর ইআরকিউ হিসাব থেকে ৫০ হাজার ডলার স্থানান্তর করা হয়েছে, যা তাঁর ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধে ব্যবহৃত হয়।

