কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায়। এটি প্রাথমিক খরচ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার তুলনায় ৬ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা বেশি। প্রকল্পটির বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২৬ সালের মধ্যে, তবে একনেকের সংশোধনের ফলে তা পিছিয়ে ২০২৯ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গত সোমবার জমা দেওয়া সরকারি নথি অনুযায়ী, প্রকল্পটির খরচ বৃদ্ধির পেছনে প্রধান পাঁচটি কারণ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়া, ভূমি অধিগ্রহণে অতিরিক্ত খরচ, নকশায় পরিবর্তন এবং নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
প্রকল্পটি ২০২০ সালের মার্চে অনুমোদিত হয়। যদিও মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য ৭১০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, প্রকৃত নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি দেশের পণ্য খালাসের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চাহিদা মেটাতে গৃহীত হয়েছে।
মাতারবাড়ী বন্দর প্রকল্পের ধারণাটি মূলত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে যুক্ত, যেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি ও পরিবহন করার জন্য একটি প্রশস্ত চ্যানেল এবং বন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ২০২০ সালে যখন প্রকল্পটি শুরু হয়, তখন ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা, যা বর্তমানে ১১৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, শুল্ক ও ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। বিস্তারিত নকশায় পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত ৬৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কাজের পরিধি পরিবর্তন’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
সড়ক ও মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা প্রাথমিক পরিকল্পনার তুলনায় কম হলেও সেতুর দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে নির্মাণ কাজের রেট শিডিউলে পরিবর্তন করা হয়েছে, ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় পরামর্শক খরচও বেড়ে যাবে।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি হলেও অ্যাপ্রোচ সড়ক ও সেতু নির্মাণের জন্যও উল্লেখযোগ্য খরচ হবে। তিনি দাবি করেন যে প্রকল্পে কোনো অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে না এবং বাস্তবায়ন পর্যায়েও প্রকল্পের উন্নয়ন মূল্যায়ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশে গভীর সমুদ্রবন্দর অপরিহার্য। ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের চাপ সামাল দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের সক্ষমতা যথেষ্ট নয়। মাতারবাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার জাপানকে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে নিয়েছে। জাপান সাধারণত কম সুদে ঋণ দেয় এবং সময়মতো প্রকল্প সম্পন্ন করে, যা দেশটির অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, এই প্রকল্পের বিষয়ে ভূ-রাজনৈতিক কারণে কিছু জটিলতা থাকলেও জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতিমুক্ত বলেও মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক মাহমুদ। এর ফলে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি এখন সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।